মধুমতি কার শাখা নদী
মধুমতি নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ এবং বাগেরহাট জেলার একটি নদী। নদীর দৈর্ঘ্য ১৭০ কিমি, গড় প্রস্থ ৪০৮ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পজাতীয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” প্রদত্ত মধুমতি নদীর শনাক্তকরণ নম্বর হল নদীর নং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ৭৪।
![মধুমতি কোন নদীর শাখা নদী](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2022/03/%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80.jpg?resize=300%2C188&ssl=1)
মধুমতি নদীর উৎপত্তি
মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে প্রবাহিত গড়াই নদী থেকে মধুমতি নদীর উৎপত্তি। এরপর নদীটি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কলতলা ইউনিয়নে প্রবাহিত হয়ে শালদহ নদীতে পতিত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ স্থবির থাকলেও বর্ষাকালে নদীর অববাহিকা উপচে পড়ে। ভাটার কারণে নদীর উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মধুমতি নদী
মধুমতি নদী (Madhumati River) বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর একটি শাখা। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে প্রবহমান গড়াই থেকে উৎপন্ন হয়ে মাগুরা-ফরিদপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে মধুমতি নামে নড়াইল ও খুলনা জেলার আঠারবেকিতে বাগেরহাট জেলায় প্রবেশ করেছে এবং বরিশালের উপর দিয়ে হরিণঘাটা মোহনার কাছে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ জীবন নিয়ে উক্তি-জীবন নিয়ে কিছু কথা
মধুমতি নদী কোন জেলায় অবস্থিত
সর্পিলাকৃতি মধুমতি নদীর দৈর্ঘ্য ১৩৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০০ মিটার ও গভীরতা ১০.৫ মিটার। নদীটির প্রবাহপথে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি, আলফাডাঙ্গা, নড়াইল জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া, গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়া এবং বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট, চিতরশারি ও কচুয়া উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মধুমতি নদীর উপর মধুমতি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আর নদীর অববাহিকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নবগঙ্গা-মধুমতি সেচ প্রকল্প চালু রয়েছে।
![মধুমতি নদী ফরিদপুর](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2022/03/%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0.jpg?resize=300%2C169&ssl=1)
মধুমতি নদী ফরিদপুর
শুষ্ক মৌসুমে সবুজ বর্ণের মধুমতি নদীর পানির প্রবাহ কমে গেলেও বর্ষাকালে পানি নদীর দু’কূল ছাপিয়ে যায়। একসময়, সুন্দরবন অঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা এই নদী দিয়ে মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করত। আর তাই স্থানীয় অনেকের মতে, নদীর সুমিষ্ট জল বা মধু বহনকারী এই নদীর নাম দেওয়া হয়েছে মধুমতি। নদীর তীরে কয়েশ বছরের প্রাচীন হাটবাজার, দালান কোঠা, মন্দির, মসজিদ ও জেলে পল্লীসহ অনেক জনপদ গড়ে উঠেছে। এছাড়াও মধুমতি নদীতে ইলিশ, বাচা, বাঘাইড়, চিতল, চিংড়ি, বেলে, আইড়, রুই ও কাতলসহ অনেক ধরণের সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। আর এই নদীর তীরবর্তী অঞ্চল গুলো খুবই উর্বর তাই ধান পাট ঘমসহ নানান অর্থকরী ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই ভালো আবাধীজমিতে পরিনিত হয়েছে।
ফরিদপুর মধুমতি নদী দেখতে কিভাবে যাবেন
মধুমতি নদীর একটি বড় অংশ ফরিদপুর জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ফরিদপুর জেলা শহর থেকে এই নদীর সৌন্দর্য সবচেয়ে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে আজমেরী, আনন্দ পরিবহন, বিকাশ পরিবহণ বা সূর্যমুখী পরিবহণে করে ফরিদপুর যেতে পারেন।
ফরিদপুর মধুমতি নদী দেখতে গিয়ে কোথায় থাকবেন
হোটেল সুন্দরবন, হোটেল পার্ক, লাক্সারি হোটেল, হোটেল রাজস্থান, জেকে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শ্যামলী, পদ্মা হোটেল এবং হোটেল সুপার হল ফরিদপুরে অবস্থিত বিভিন্ন আবাসিক হোটেল।
ফরিদপুর মধুমতি নদী দেখতে গেলে কোথায় খাবেন
ফরিদপুরে রেইনফরেস্ট হোটেল, শাহী রেস্তোরাঁ, জাকির হোটেল এবং টেরাকোটার মতো খাবারের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
ফরিদপুরের দর্শনীয় স্থান
ফরিদপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে কানাইপুর জমিদার বাড়ি, পল্লী কবি জসিমউদ্দিন বাড়ি, নদী গবেষণা কেন্দ্র, মথুরাপুর দেউল এবং পাতরাইল মসজিদ।
![মধুমতী নদীতে ৬ লেনের সেতু](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2022/03/%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C.jpg?resize=273%2C197&ssl=1)
মধুমতী নদীতে ৬ লেনের সেতু
নড়াইলের লোহাগড় উপজেলার মধুমতি নদীর উপর কালনা পয়েন্টে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে। এটিই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি চালুর লক্ষ্যে সেতুর শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড় উপজেলা।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে করলে বাচ্চা হয়
মধুমতি নদী গোপালগঞ্জ
মধুমতি বাওড়
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে মধুমতি বাওড় (Modhumoti Baor) অবস্থিত। কাশিয়ানি উপজেলার ফুকরা, ধানকোড়া, রাতইল, চাপ্তা, ঘোনাপাড়া, পরানপুর, সুচাইল, তারাইল, পাংখার চর ও চরভাটপাড়া মৌজা জুড়ে মধুমতি বাওরের অবস্থান। সত্তর দশকের শেষের দিকে মধুমতি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ১.৫ কিলোমিটার দূরে দুই দিকে দুইটি বাঁকের সৃষ্টি হয়। যার একটি বাঁকের মুখে পলি জমে উজানের মুখটি বন্ধ হয়ে একটি জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। আর এই জলাশয়টিই মধুমতি বাওড় নামে পরিচিত।
![মধুমতি নদী গোপালগঞ্জ](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2022/03/%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9C-1.jpg?resize=300%2C213&ssl=1)
প্রায় ১৬২ হেক্টর আয়তনের মধুমতি বাওড়টি মৌসুমভেদে ভিন্ন ভিন্ন নব রূপে সেজে উঠে। শুষ্ক মৌসুমে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬০০ ফুট প্রস্থের এই বাঁওড়টি বর্ষাকালে প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১২০০ ফুট প্রস্থের বাওড়ে পরিণত হয়। মধুমতি বাঁওড়ের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোর মাধ্যমে রাতইল ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়া বিকেল বেলা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে বাঁওড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য মধুমতি বাওড় স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আর দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য হিসেবেও এই বাওড়ের রয়েছে বিশেষ পরিচিতি।
অরও পড়ুনঃ চোখের জন্য উপকারী খাবার
মধুমতি নদীর তীরে পানিপাড়া গ্রাম
ছায়া-শীতল পথ, বন, জল, পাখির কিচিরমিচির—সে জায়গায় যে পা রাখলেই ভালো লাগবে। জায়গাটির নাম পানিপাড়া। একটি ছোট গ্রাম. নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় অবস্থিত। নড়াইল-গোপালগঞ্জ সীমান্তে নাব্যতা হারিয়ে মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত পানিপাড়া গ্রামটি এক অপরূপ সৌন্দর্য।
![মধুমতি নদীর তীরে পানিপাড়া গ্রাম](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2022/03/%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE.jpg?resize=300%2C218&ssl=1)
এলাকাবাসী জানায়, নির্জন পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা গ্রামে আসছেন। গ্রামের সবাই মুগ্ধ। সারা বছর দেশ-বিদেশ থেকে নানা প্রজাতির পাখির আগমন কলতানের মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে।
গোপালগঞ্জের মানিকদহ গ্রামের গৌতম দাস তার পরিবার নিয়ে পানিপাড়া গ্রামে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, পুরো গ্রামটি এমন সবুজ যে মন ভালো হয়ে যায়। চারপাশটা খুব সুন্দর। বিশেষ করে এখানকার পাখিরা সবচেয়ে ভালো। যেন পাখির অভয়ারণ্য। দেশ-বিদেশের নানা পাখি উড়ে বেড়ায়। এটি দেখতে সুন্দর।
পানিপাড়া গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটক
একই জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেশমা খাতুনও সপরিবারে এসেছেন পানিপাড়া গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর আগেও অনেক জায়গা ঘুরেছি। তবে এমন নিরিবিলি পরিবেশ আমি খুব কমই দেখেছি।
পানিপাড়া গ্রামে যেতে হলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া বা মাওয়া পদ্মা নদী পার হয়ে ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া হয়ে দিঘলিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হয়। সেখান থেকে অটোরিকশায় মধুমতি নদীর তীরে যেতে হবে। অথবা আপনি গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইন মোড় থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা একটি প্রাইভেট কার নিয়ে শহরের মধ্য দিয়ে মধুমতি নদী চাপাইল ব্রিজ পার হয়ে সরাসরি পানিপাড়া গ্রামে পৌঁছাতে পারেন।
পানিপাড়া গ্রামে কিভাবে জাবেন
ঢাকা থেকে সেখানে যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ইমাদ, দোলা, ফাল্গুনী, সেবা, সবুজসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন পাওয়া যায়। এসব পরিবহন মাওয়া-ভাটিয়াপাড়া হয়ে খুলনাসহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যায়। রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, পাবনা, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার বাসিন্দাদেরও পানিপাড়া গ্রামে সহজ প্রবেশাধিকার রয়েছে। যশোর মণিহারের সামনের রাস্তায় নড়াইল-কালনা ফেরি পার হয়ে দিঘলিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে।
পানিপাড়া গ্রামে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ১৮ একর জমিতে তাদের রিসোর্ট গলফ ক্লাব তৈরি করা হয়েছে। ক্লাবটিতে বেশ কিছু মানসম্পন্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সাধারণ আবাসিক ভবন রয়েছে। রয়েছে সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা। তিনি বলেন, পানিপাড়া গ্রামে একবার এলে যে কেউ বারবার আসতে চাইবে।
আরও পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়
Very nice write-up. I definitely appreciate this site. Thanks!