ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই যথেষ্ট। একটু পানিও প্রয়োজন নেই। তাই ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর খাদ্যতালিকা হলো শুধু বুকের দুধ।
৬-৮ মাস বয়স
সকাল ৭টা-৮টা বুকের দুধ অথবা ৬-৮ আউন্স দুধ
সকাল ১০টা, ৪-৬ টেবিল চামচ সুজি/খিচুড়ি, ৪-৬ টেবিল চামচ চটকানো ফল।
দুপুরে বুকের দুধ অথবা ৬ আউন্স দুধ, ১-৩ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
বিকেলে ১-৩ টেবিল চামচ চটকানো ফল। বুকের দুধ, ৩-৬ আউন্স দুধ
রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। খিচুড়ি/সুজি ৪ টেবিল চামচ।
সকাল ৭টা-৮টা বুকের দুধ অথবা ৬-৮ আউন্স দুধ
সকাল ১০টা, ৪-৬ টেবিল চামচ সুজি/খিচুড়ি, ৪-৬ টেবিল চামচ চটকানো ফল।
দুপুরে বুকের দুধ অথবা ৬ আউন্স দুধ, ১-৩ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
বিকেলে ১-৩ টেবিল চামচ চটকানো ফল। বুকের দুধ, ৩-৬ আউন্স দুধ
রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। খিচুড়ি/সুজি ৪ টেবিল চামচ।
৯-১২ মাস বয়স
সকাল ৭-৮টায় বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ।
সকাল ১০টায় চার-আট টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি, ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল।
দুপুরে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি। ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস
বিকেলে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। বিস্কুট/দই/মিষ্টি জাতীয় যেকোনো একটা খাবার।
সন্ধ্যায় ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস। ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল। নুডলস/নরম পিঠা/কেক ইত্যাদি।
রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪-৬ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
সকাল ১০টায় চার-আট টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি, ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল।
দুপুরে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি। ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস
বিকেলে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। বিস্কুট/দই/মিষ্টি জাতীয় যেকোনো একটা খাবার।
সন্ধ্যায় ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস। ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল। নুডলস/নরম পিঠা/কেক ইত্যাদি।
রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪-৬ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
শিশুর জন্য সুষম খাদ্য
প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান শিশুদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা, খাদ্য, পুষ্টি সমস্যাসহ নানা বিষয়ে ইত্তেফাকের স্বাস্থ্য পাতায় নিয়মিত লিখবেন। এ সংখ্যায় লিখেছেন শিশুর জন্য সুষম খাদ্য নিয়ে।
স্বাস্থ্য সুঠাম ও অটুট রাখতে হলে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজন। দেখা গেছে: মাছ, মাংস বা ডাল, দুধ, ভাত বা রুটি, ফল-সবজি, পানি এই পাঁচ জাতের খাদ্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। এই খাবারগুলোর প্রতিটির পরিমাণ এমন হতে হবে, যাতে কেলোরি, ভিটামিন, খণিজ-লবণ, পানি- এই চারটি জিনিসেরই দৈহিক চাহিদা ঠিকমত পূরণ হয়; আর এ-রকম খাদ্যই হচ্ছে সুষম খাদ্য। সাধারণভাবে বলা যায়, উপরে যে ছয় ধরনের খাবারের উৎস লিখা হয়েছে, এর প্রতিটি উৎস থেকে একটি বা দুটি পছন্দসহ খাবার-যা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এবং দামেও কম-বেছে নিয়ে মিলিয়ে প্রতিদিন খেলে দেহের খাদ্য-চাহিদা পূরণ হয়।
প্রতিদিনই মাছ, মাংস বা ডিম জোগাড় করা না গেলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এ-গুলোর পরিবর্তে ডাল, সিমের বিচি বা ছোলা খেলেও চলবে। অনেক শিক্ষিত পরিবারে-এ রকম দেখা যায়: ছেলে পছন্দ করে তাই তাকে ভাত, চিনি ও ঘি দিয়ে খাবার দেয়া হয়। এ-ভাবে খেলে তার কাজ করার শক্তির চাহিদা কিছুটা মিটবে, কিন্তু এই খাবারে আমিষ-লবণ-ভিটামিনের অভাবহেতু তার শরীরের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি-সাধন হবে না, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জন্মাবে না।
আমাদের খাওয়ার অভ্যাস
খাবার দামী হলেই যে তা সব সময় ভাল খাবার হবে, এর কোন মানে নেই। কম দামের খাবার থেকেও দেহের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাপাদান পাওয়া যেতে পারে। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেশী; এ সমস্ত আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব আমরা কম দামের খাদ্য, যেমন ডাল, সিম, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে পারি। হয়তো অনেকেই জানেন না যে, ডালে প্রচুর আমিষ থাকে, ডাল থেকে ভিটামিন এবং খণিজ লবণও পাওয়া যায়।
ভাত-ডাল-তেল-সবজি (কলা-পেঁপে-লাউ) এবং সম্ভব হলে মাংস, কলিজা বা ডিম মিলিয়ে যে খিচুড়ি তৈরী করা হয়, তা খুবই মুখরোচক এবং পুষ্টিকর। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্যাপাদানই বর্তমান থাকে। চালের চেয়ে গম কম পুষ্টিকর নয়। গমের দামও কম। দুই-এক বেলা আটার রুটি বা আলুর চপ খেয়েও আমরা চালের চাহিদা কমাতে পারি। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ আছে।
গ্রামে প্রায় প্রত্যেকের বাড়ীতেই রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট এক চিলতে জায়গা থাকে। এতে সহজেই মৌসুমী ফল-মূল ও শাক-সবজি ফলানো যায়। তাহলে, শাক-সবজি বাজার থেকে কম কিনতে হয়।
অনেকেই মনে করেন: ফল দামী হলেই বুঝি এর খাদ্যমান বেশী হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপেল ও কমলালেবুর দাম পেয়ারা বা আমলকির চাইতে অনেক বেশী; কিন্তু পেয়ারা বা আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, তা কমলালেবু ও আপেলের চাইতে অনেকগুণ বেশী। উপরোন্ত, পেয়ারাতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। আঙ্গুরের খাদ্যমান অত্যন্ত নিম্নমানের।
অধ্যাপক ডা. এম আর খান, লেখক : জাতীয় অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, জানুয়ারী ১১, ২০১০।
শিশুর খাদ্য কেমন হওয়া উচিত
শিশুর খাদ্য অপর্যাপ্ত কিংবা ত্রুটিপূর্ণ হলেই শিশু হবে অপুষ্টির শিকার। তাই সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে শিশুকে বেড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা। শিশুর খাদ্য নির্বাচনের সময় তার বয়সসীমা, তার কার্যকলাপ, সুস্থতা ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষণীয়। শিশু বয়সকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন_ ১ থেকে ৩ বছর, ৩-৬ বছর [প্রি-স্কুলগামী], ৬-১২ বছর [স্কুলগামী]। আবার শিশুর বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে নজর রাখতে হয় তার খাবারের কিলোক্যালোরি, প্রোটিন, খনিজ লবণ [ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, জিংক ও আয়োডিন], ভিটামিন [এ, ডি, সি, বি-কমপ্লেক্স], পানি ও দুধের প্রতি।
তাহলে জানা দরকার বয়সভেদে খাবারের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন_ ১-৩ বছরের শিশুর দৈনিক কিলোক্যালোরির প্রয়োজন ১২১০-১২৫০। কিন্তু ৩-৬ বছরের শিশুর প্রয়োজন ১৭০০ কিলোক্যালোরি দিনে। সে ক্ষেত্রে ৬-১২ বছরের শিশুর প্রয়োজন আছে ১৯৫০-২১০০ কিলোক্যালোরি। এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েতে কিছুটা পার্থক্য দেখা দেয়।
প্রোটিনের বেলায়, শিশু বয়সেই প্রতি কেজি ওজনের জন্য বেশি প্রোটিন প্রয়োজন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কেজি ওজনে কমলেও মোট প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন_ ১-৩ বছরে ১.৫-২ গ্রাম/কেজি; ৩-৬ বছরে ২ গ্রাম/কেজি; ৬-১২ বছরে মোট প্রোটিন প্রয়োজন ৪০-৬০ গ্রাম দিনে।
এ ছাড়াও অন্যান্য উৎপাদানের চাহিদা মেটানোর জন্য অল্প করে দৈনিক খাবারের পরিমাণ [মাছ, মাংস, ভাত, রুটি, সবজি, ফল ইত্যাদি] বাড়ালেই যথেষ্ট। তবে দুধের পরিমাণ খাবারে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধের পরিমাণ কমে অন্য খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে, তবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ থাকা প্রয়োজন।
কোন ধরনের খাবার শিশুর জন্য উপযোগী
ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, পাতাসবজি, সবজি, মৌসুমি ফল, শুকনা ফল, পানি ও পানীয় সব ধরনের খাবারের সঙ্গেই শিশুকে অভ্যস্ত করতে হবে এবং দৈনিক খাদ্য তালিকায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে শিশুভেদে খাবার তৈরিতে কিছুটা পার্থক্য রাখা যায়। যেমন_ কোনো শিশু সরাসরি ডিম খেতে না চাইলে তাকে ডিমের হালুয়া, পুডিং, কাস্টার্ড ইত্যাদি তৈরি করে দেওয়া যায়। মাছ-মাংসের পরিবর্তে খিচুড়ি দেওয়া যায় কিংবা ফিশফিঙ্গার, কাবাব তৈরি করা যায়। আবার সবজি বড়া তৈরি করে সবজির চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব।
এ ছাড়াও মনে রাখা দরকার, নতুন নতুন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে মৌসুমি ফল, সবজি অবশ্যই শিশুর খাদ্যে সংযোজন করা প্রয়োজন। তবে জাঙ্ক ফুড শিশুর সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়। ফলে এসব খাবার শিশুর খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া বাঞ্ছনীয় এবং যে খাবারই দিই না কেন সেটা যেন টাটকা হয়।
লেখা: রেহানা ফেরদৌসী মিলি
শিশু-কিশোরদের খাবার দাবার
জীবন ধারণ, বৃদ্ধি এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন-এ কথা নতুন করে কাউকেই বলতে হবে না। কিন্তু তারপরও খাবার নিয়ে একটা অনাচার আমাদের সবার নজরে পড়ে। একদল প্রয়োজনীয় খাবার যোগাতে পারছে না। অন্য আরেকটি দল প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খাবার গ্রহণ করছে। পরিণামে এই দুই দলই সমস্যায় পড়ছে। এ সমস্যায় যেন আমরা না পড়ি তাই শিশু ও কিশোরের দেহের বিকাশের জন্য কি ধরণের খাদ্য দরকার আজকের আসরে সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হবে। আর এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ ডায়বেটিস হাসপাতাল বা বারডেমের পুষ্টিবিদ খালেদা খাতুন।
শিশু কিশোরকে কি খাবার দেয়া হবে তা নিয়ে অনেক মা-বাবা কিংবা অভিভাবকদের চিন্তার কোনো শেষ নেই। কারণ মা-বাবা এবং অভিভাবকরা সব সময় কামানা করেন তার সন্তানটি যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে। এ কারণে গরীব বাবা-মা সন্তানের মুখে সাধারণ খাবার দাবার তুলে দেন আর দুশ্চিন্তায় ভুগেন। তার সন্তানটি হয়ত সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না।
অথচ খাবারটি সুষম হলে তাই দেহের প্রয়োজনীয় বৃদ্ধির সহায়তা করে। এ জন্য দামি খাবারের কোনো দরকার নেই। অন্যদিকে ধনী মা-বাবা বা অভিভাবকরা এই পুষ্টির যোগান দিতে যেয়ে কথিত দামি এবং তেল-ঘি সমৃদ্ধ মজাদার খাবার অকাতরে সন্তানের পাতে তুলে দেন-যা ঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে, শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত যে কোনো বয়সের মানুষের খাদ্য তালিকা সুষম হতে হবে। সুষম বলতে একজন পুষ্টি বা খাদ্যবিদ, শর্করা, স্নেহ, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ উপাদানকে বুঝিয়ে থাকেন। এ সাথে অবশ্য পানির কথাটি এসে যাবে।
খাদ্যের সাথে প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণেরও প্রয়োজন রয়েছে। আসলে খাবারের দাম থেকে তার পুষ্টিমান যাচাই হতে পারে না। ডাল-ভাত সস্তা খাবার। অন্যদিকে যে কোনো ধরণের গোশতই দামি খাবার। কিন্তু ডাল-ভাত খেলে দেহের বিশেষ করে শিশু এবং কিশোরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান ঘটতে পারে।
অর্থাৎ গোশতের মতো দামি খাবার দেহের জন্য যতোটা আমিষের যোগান দেয় তার প্রায় সবটাই পাওয়া যেতে পারে যে কোনো ধরণের ডাল এবং সাথে আরেকটি শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। এই শর্করা জাতীয় খাবার ভাতই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এটি রুটি বা অন্য কিছু হতে পারে। রুটি হলে তা গমের আটা না হয়ে যদি ভুট্টা বা যবের আটা হয় তাতেও কোনো অসুবিধা হবে না।
বাড়ন্ত শিশু বা কিশোরের জন্য বাড়তি আমিষের প্রয়োজন রয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। তার এই বাড়তি আমিষের চাহিদাও সহজেই ডাল ও শর্করা জাতীয় খাবারের সংমিশ্রণে প্রস্তুত খাদ্য দিয়ে পূরণ করা যায়। বাংলাদেশে এ জাতীয় একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য হলো খিচুরি। মূল উপাদান ঠিক রেখে এই খাবারকেই নানা ভাবে মুখরোচক এবং উপাদেয় করে সন্তান সহ বাড়ির সবার পাতে পরিবেশন করা যায়।
কিন্তু সমস্যা হলো খাদ্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে একশ্রেণীর মানুষ চারপাশে সস্তায় প্রয়োজনীয় খাবারের মজুদ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না। আর অন্য একটি শ্রেণী সস্তা খাবারে দিকেই ঝুঁকেন না। তারা দামী এবং সেরা খাবার যোগানোর জন্য যা নিয়ে আসেন একজন খাদ্য বিজ্ঞানী সে সব খাবারকে এক কথায় বাজে ছাড়া আর কিছুই বলতে পারবেন না।
তারাও সুষম খাদ্যের কথাটি ভুলে যান তার জায়গায় সন্তানকে দেহের জন্য ক্ষতিকর রিচ ফুড বা সমৃদ্ধ খাবারের যোগান দেন অকাতরে।
এই দুই শ্রেণীর মধ্যেই খাদ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে তা স্বীকার করতেই হবে। কিংবা পড়ালেখা বা প্রচার মাধ্যম থেকে যে জ্ঞান তারা পাচ্ছেন তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না।
আর এ কারণেই এই দুই শ্রেণীর মানুষই তাদের সন্তানের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার পথে প্রধান বাধা হয়ে উঠছেন তা বোধ হয় স্বীকার করতে কারোই অসুবিধা হবে না।
খাদ্যকে সুষম করতে হলে তাতে আমিষ, শর্করা, স্নেহসহ খনিজ, ভিটামিন প্রভৃতি থাকতে হবে। তেল দিয়ে খাবার রান্না হয় তা থেকে এই স্নেহ জাতীয় খাবারের যোগান আসতে পারে। আর আমিষ ও শর্করা নিয়ে আগেই কথা বলেছি।
বাংলাদেশে সব ঋতুতেই নানা ধরণের দেশি ফল এবং শাক সবজি পাওয়া যায়। দেশি এই সব ফল এবং শাক সবজি দামে মোটেও বেশি নয়। তাই যদি নিয়মিত এ সব খাবার সন্তানের মুখে তুলে দেয়া হয় তা হলে তার খনিজ ও ভিটামিনের যোগান ঠিক থাকবে।
সন্তানের দৈহিক ও মানসিকভাবে তার বেড়ে উঠতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু সঠিক পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা না করে শিশু বা কিশোরকে দামি এবং তেল-চর্বি বহুল সমৃদ্ধ খাবার দেয়া ঠিক হবে না। বরং এ জাতীয় খাবার হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দিতে পারে।
শিশু কিশোরের দৈহিক উন্নয়ন ঘটাতে যেয়ে তাকে বাড়তি ওজনের বিপদের দিকে ঠেলে দেবেন না। ইদানিংকালে চিকিৎসা এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞরা শিশু-কিশোরদের বাড়তি ওজনের ব্যাপারে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
অনেকেই আবার বলে থাকেন তার বাচ্চা সবজি খেতে চায় না বা গোশত ছাড়া আর কিছুই মুখে দেয় না। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে বাবা-মা বা অভিভাবক তার সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো শিশুই মুখে কোনো স্বাদ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে না। বরং স্থান ও কালভেদে তার খাদ্য অভ্যাস গড়ে ওঠে। আর এ অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেন বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই। শিশুকে বিশেষ কোনো খাবার বা আমিষ এককভাবে
গ্রহণ করলেই তার দেহের পুষ্টির প্রয়োজন মিটবে না।
শিশু-কিশোরকে অবশ্যই সুষম খাদ্য অর্থাৎ মিশ্র খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই শিশুর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে সতর্ক হবেন। চারপাশে সহজলভ্য এবং সহনীয় দামের খাদ্যদ্রব্য থেকে যখন শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির সহজ যোগান পাওয়া যাবে তখন কেনো কথিত দামী খাদ্য দ্রব্যের দিকে ঝুকবেন ? কমদামি খাবার মানেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এবং দামি মানেই ভালো সে কথা সব সময় ঠিক নয় সে কথা নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পেরেছেন।
তথ্য সুত্র ও ছবি: ইন্টারনেট থেকে পাওয়া
এই পোস্টে কোন ভুল থাকলে কমেন্ট করবেন সংশোধন করে নেওয়া হবে।