আসসালামু আলাইকুম, আমরা আজকে এই পোস্টে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত। গুগলে প্রতিদিন অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম জানতে সার্চ করে যাচ্ছেন।
আশা করি আজকে ইসলামিক / নামাজ পোস্ট থেকে আপনারা বিস্তারিত যানতে পারবেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ
তাহাজ্জুদের নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে লাভ করবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারাই, যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। এটি একটি নফল ইবাদত হলেও এটি নফল ইবাদতের মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত।
তাহাজ্জুদের নফল নামাজকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং সাহাবীদের আদায় করতে উৎসাহিত করতেন। কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি। ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। – (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
তাহাজ্জুদ আরবি ভাষা থেকে এসেছে। এর আমল সমন্ধে পবিত্র কোরআনে অনকেবার উলেখ্য আছে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ঘুম যাওয়া আবার জাগ্রত হওয়া অর্থে বুঝানো হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯নং আয়াতের বলা হয়েছে যে, প্রতি রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।
“ইশরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়। সাধারণত এর অর্থ এভাবে নেয়া হয় যে, কিছুক্ষণ নিদ্রা যাওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের নামাজ।”
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।” (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ) আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে বিশেষভাবে রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر
অর্থ : আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করিলাম।
আল্লাহু আকবার।
অথবা এভাবে বলতে পারেন- দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি..
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলায় উচ্চারণ
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”
বাংলা অর্থঃ “আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে তাহাজ্জুদ নামাজ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো ছোট বা বড় সুরা দিয়েই এ নামাজ আদায় যায়। তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লম্বা কেরাতে এই নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে বা বড় সুরায় তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
অন্য নামাজের মত প্রথমে দুই রাকাআত তাহাজ্জুদের নিয়ত করে,
তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
অতঃপর ছানা পড়া
এবং সুরা ফাতেহা তিলায়াত করা।
সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন।
অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা।
এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পন্ন করা।
একই ভাবে দুই রাকাআত করে মোট ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকআত
তাহাজ্জুদ নামাযের সর্বনিম্ন দুই রাকআত থেকে সর্বোচ্চ বার রাকআত। তবে আট রাকআত পড়া উত্তম।
তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামায আদায় করার পরে, বিতর তিন রাকাত নামায পড়া উত্তম।
বেশিরভাগ সময় রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায আট রাকাত পরতেন এবং এর পর বিতরের নামায পরে মোট এগার রাকাত পূর্ণ করতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িসহ সব যুগের ওলি ও বিদ্বানরা তাহাজ্জুদ নামাজে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়। সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা।
যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।
তাহাজ্জুদ নামাযের সময়
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অর্থাৎ অর্ধ রাতের পরে তাহাজ্জুদ নামাজ অদায় করা উত্তম। তাহাজ্জুদের মূল সময় মূলত রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আযানের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত থাকে।
তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশা সালাতের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে। তবে পরিপূর্ণ তাহাজ্জুতের মর্যাদা পেতে হলে, আপনাকে অবশ্যই রাত ২টা থেকে ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।
কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের সর্বোত্তম সময় এই যে, এশার নামাযের পর লোকেরা ঘুমাবে।
তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে। নবী (সাঃ) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে তাহাজ্জু নামায পড়তেন।
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজ অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মত ফরজ নামাজ নয়। তাই এই নামাজ না পড়লেও কোন গুনাহ হয় না। প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তিকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে তাহলে তার কোনো গুনাহ হয়না, কিন্তু অনেক সওয়াব হয়। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও অনেক বেশি। কারণ অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ অন্যতম।
তাহাজ্জুদ নামাজ পুরুষ ও মহিলা সকলেই পড়তে পারে। আল্লাহ তায়ালা পুরুষ মহিলা সবাইকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের কোন পার্থক্য নেই।
উপরে উলেক্ষিত নিয়মেই মহিলা ও পুরুষ সবাই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন।
আরও পড়ুন:
- ইসলাম ধর্মে কোরবানি ও কোরবানি সম্পর্কে নবীজির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস
- এশার নামাজ কয় রাকাত নিয়ত সূরা?
- আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
তাহাজ্জুদ (تهجد) অর্থ ঘুম থেকে জাগা। তাহাজ্জুদ নামাজ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ
তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে উত্তম ও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তি জীবনে একবার হলেও যেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে। কারণ তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। নবী করীম (সাঃ) প্রতি রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় রাত বারোটার পর থেকে ফজর নামাজের আগে পর্যন্ত। যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে দোয়া করে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। মধ্যরাতে আল্লাহ তায়লা দুনিয়ার আসমানে চলে আসেন
এবং আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। আমার কাছে দোয়া করো আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে পুরুষ লোক রাতে তার স্ত্রীকে ডেকে নামাজ আদায় করার কথা বলে এবং যে স্ত্রী তার স্বামীকে রাতের বেলা ঘুম থেকে ডেকে নামাজ আদায় করতে বলে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
গুগলে সার্চ পরে এমন কিওয়ার্ড সমুহ
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বাংলা উচ্চারণ,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মিজানুর রহমান আজহারী,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কানুন,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সময়,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও দোয়া,
সালাতুত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,
সালাতুল তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও সূরা,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও কয় রাকাত,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বাংলায়,,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম কারণ,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম facebook,
৪ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম,
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মাবলী,
তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে উত্তম ও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী।