আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

পবিত্র কোরআন শরিফের দ্বিতীয়মত সুরা বাকারা। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতটি আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াত জুরে মহান আল্লাহতাআলা একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা রয়েছে যে কারনেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এটি পাঠ করলে অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়।

হাদিস শরিফে বর্ননা রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহ সালাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকে না। (শুআবুল ঈমান : ২৩৯৫)।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর এই আমল করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। আমাদের কম বেশি সবারই মুখস্থ রয়েছে আয়াতুল কুরসি। যারা পারি না, তারাও মুখস্থ করে নিতে পারেন। নিচে আমরা আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ শেয়ার করেছি।

আয়তুল কুরসি:

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ:

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম।
লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি।
মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম,
ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি,
ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)।

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ:

আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন।
তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে,
তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে আয়াতুল কুরসির পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত

আয়াতুল কুরসির ফজিলত অনেক রয়েছে নিচে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর আয়াতুল কুরসি সম্পর্কৃত কিছু হাদিস তুলে ধরা হলোঃ

১। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লালাহ সালাম বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ আদায়ের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সময় তার জান কবজ করা হবে খুব সহজভাবে ।

২। অন্য হাদিসে আছে, যারা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তাদের জন্যে জান্নাতে যেতে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই সেই ব্যক্তি আল্লাহর জান্নাতের শান্তি উপভোগ করতে থাকবে।

৩। হাদিসে বলা আছে, যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহ তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন এবং সে ফেরেশতা সারা রাত তাকে পাহারা দিবে এবং দুষ্ট জীন ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।

৪। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তার সয়-সম্পতি ফুঁক দেয় তাহলে তার ওই সয়-সম্পতি কোনো চোরে নিতে পারবে না।

এ বিষয় একটি ঘটনা হযরত আবু হুরায়রা (র) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ একবার রসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে কিছু সম্পদ পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। আমি পাহারা দিচ্ছিলাম এমন সময় ঘুম আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আমি তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ওই সম্পদে ফুঁক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। তখন চোর এলো সম্পদগুলো চুরি করার জন্যে। কিন্তু চোর ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলো।

৫। যারা আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আল্লাহ তাদের জান্নাতের আটটি দরজার সবগুলো দিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ দিবেন।

6। হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ রাদি আল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি।

আরও পড়ুনঃ

৭। হজরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু একদিন দেখতে পেলেন, একজন ব্যক্তি সদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী। আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসুল (সা.)–এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘গতকাল তোমার অপরাধীকে কী করেছ?’ আবু হুরায়রা তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে।’ পরদিন আবু হুরায়রা চোরকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, ‘এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।’

এবারও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক সম্পদ প্রয়োজন আর শপথ করে যে আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (স) আবু হুরায়রা (র) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন মুহাম্মাদ (স) বলেন, আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবারও আসবে। পরদিন আবারও আবু হুরায়রা (রা.) চোরের জন্য অপেক্ষা করত লাগলেন, আর যখন চোর আবারও চুরি করতে আসল, তখন আবু হুরায়রা (রা.) চোরকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার কোন কথা নাই অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাব।

চোর যখন দেখল এবার তাকে সত্যিই রাসুল (সা.)–এর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, ‘আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।’ আবু হুরায়রা (রা.) সেটা জানতে চাইলে চোর বলে, ‘যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহতাআলা তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দিবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে, আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।’ রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)–কে বললেন, আবু হুরায়রা তুমি কি জানো কে সে ?’ আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)–কে বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। [সহিহ বুখারি নম্বর ২৩১১]

তাই প্রতি নামাজ শেষে, ঘুমানোর আগে বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস করুন।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে আয়াতুল কুরসী মুখস্ত এবং নিয়মিত পাঠ করার তাওফিক দান কারুন এবং এর গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের জীবন গড়ার তাওফিক দান কারুন (আমিন)।

আরও পড়ুনঃ

আয়াতুল কুরসির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এই আয়াতে থাকা আল্লাহের গুনাগুন ।

প্রথমেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ, উপাস্য বা ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই। এরপর আল্লাহর গুণাবলি বর্ণনা হয়েছে। اَلْـحَيُّ এই শব্দের মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে, তিনি সর্বদা জীবিত, তিনি অমর। قَيُّوْمُ এই শব্দের অর্থ হচ্ছে, তিনি নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং এই মহাবিশ্বের সব কিছু তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন।

অতপর বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ্তাআলা’কে তন্দ্রা (ঘুমের প্রাথমিক প্রভাব বা ক্লান্তি) ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। সুতারাং মহাবিশ্বের সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ তাকে ক্লান্ত করতে পারে না। অতএব তিনি সর্বক্ষণ আসমান জমিনের সব কিছু তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করেন, কারোর পক্ষে তাকে ফাঁকি দেওয়ার মত কোন সুযোগ নেই।

পরের অংশে স্পস্ট ভাবে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্তাআলা আকাশ এবং জমিনের সবকিছুর একমাত্র মালিক এবং আল্লাহ্তাআলা যা কিছু করেন, তাতে কারো আপত্তি করার অধিকার নেই।

তার অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও আসমান জমিনের কারো নেই। আসমান জমিনের সব কিছুই একমাত্র আল্লাহের প্রশংসা করে।

মহান আল্লাহ্তাআলা অগ্র-পশ্চাৎ যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছেন। অগ্র-পশ্চাৎ শব্দটি তাদের জন্মের পূর্বের ও জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা অর্থে ব্যবহিত হয়েছে। আবার এ অর্থও হতে পারে যে, অগ্র বলতে মানুষের কাছে প্রকাশ্য, আর পশ্চাত বলতে বোঝানো হয়েছে যা মানুষের কাছে অপ্রকাশ্য বা গোপন। আল্লাহ সব কিছুর বিষয়ে জানেন, তিনি অন্তরজামি।

মহান আল্লাহ্তাআলা যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন সে শুধু ততটুকুই পেয়েছে বা পায়। আমরা অনেক কিছুতেই বাড়াবাড়ি করে ফেলি যেমন অনকেরে মুখে বলতে শোনা যায় আল্লাহ সবাইকেই সমান জ্ঞান দিয়েছে কেউ চর্চা করে না তাই তার জ্ঞান কম যা সম্পুর্ন ভূল। এই আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ যে মহান আল্লাহ্তাআলা সবাইকে সমান ভাবে জ্ঞান দান করেন নি। যাকে যে পরিমাণ করেছে সে ততটুকুই পায় বা পেয়েছে। এটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার কোন সুযোগ নেই, কারন সবার জ্ঞানের পরিধি যদি এক রকম হত তাহলে বিশ্বের সকল মানুষ একই চিন্তা করত এবং বিশ্বে এক জিনিস ছাড়া অন্য কোন জিনিস আবিস্কার হতো না।

পরের অংশে বলা হয়েছে মহান আল্লাহ্তাআলা’র আরশ ও কুরসি এতটাই বড় যে, তা সমগ্র জমিন ও আকাশ কে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। এই দুই মহান সৃষ্টি এবং আসমান ও জমিনের রক্ষণাবেক্ষণ তার জন্য খুবই সহজ। অতএব এথেকে বুঝা যায় আসমান জমিনের সকল কিছুই আল্লাহ রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। আল্লাহ কোন কিছু রক্ষা না করলে আমরা হাজার চেষ্টা করেউ সেটা রক্ষা করতে পারবো না।

শেষ অংশে মহান আল্লাহ্তাআলা’কে “সুউচ্চ সুমহান” বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্তাআলা’র সমতুল্য বা সমকক্ষ কেও নেই, তিনি একমাত্র এবং অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই।

Sharing Is Caring:

আসসালামুয়ালাইকুম! আশা করি আপনারা সবাই সুস্থ আছেন, আর যদি অসুস্থ থাকেন তবে দু’আ করি আল্লাহ আপনাকে শীঘ্রই সুস্থ করুন…আমরা অনেকেই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু এই জানার জন্য প্রয়োজন ভালো মানের বিশুদ্ধ ইসলামিক উৎস। যা অনলাইলে খুজে পাওয়া একটু কঠিন সে দিক চিন্তা করেই আমি প্রথন ইসলামিক বিষয় নিয়ে লেখা লেখি শুরু করি। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে নিজের ভাষায় লিখে আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ধন্যবাদ!

Leave a Comment