তালাকের পর যৌতুকের মিথ্যা মামলা বা স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা শিকার হায়েছেন অনেকে।
আপনি যদি আপনার স্ত্রীর দ্বারা মিথ্যা মামলার শিকার হন তবে আইন ও আদালতের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে মামলাটি লড়ুন। ঘোষণার কপি সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। যদি এমন হয় যে আপনি জানেন না এবং পুলিশ হঠাৎ এসে আপনাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়, তবে আপনাকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তারপর আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। কাগজপত্র ও প্রমাণ সঠিক হলে মিথ্যা মামলা এড়ানো যাবে। মামলা থেকে পালানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
মনে রাখবেন আপনার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যেতে পারে. যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা না পান, তাহলে তিনি আপনাকে খালাস দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন। জামিন না হলে পর্যায়ক্রমে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করতে হবে। আপনি প্রসিকিউশন থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন খারিজ হলে আপনি হাইকোর্টে প্রতিকার চাইতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, থানার পরিবর্তে আদালতে সিআর মামলা হলে আদালত সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। বিশেষ ক্ষেত্রে, আপনি হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ তালাক ও নারী নির্যাতন মামলা খরচ
তালাকের পর যৌতুকের মিথ্যা মামলা বা স্ত্রী কর্তৃক নারী নির্যাতন মিথ্যা মামলা হলে কি করবেন?
আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। বাংলাদেশের সর্বত্র নারী নির্যাতনের ঘটনা খুবই নিত্যনৈমিত্তিক। আর এজন্যই নারী নির্যাতনকে প্রতিরোধ করার জন্য ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন পাশ হয়।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের বেশিরভাগ মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ১১গ ধারায় করা হয়। ১১গ ধারায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই ধারার এখন সারা বাংলাদেশে অপপ্রয়োগ হচ্ছে, মিথ্যা মামলা হচ্ছে। যেমন:
১) সংসারে স্বামী স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছে না এই ধারায় মামলা করা হচ্ছে।
২) স্ত্রী আর সংসার করতে চাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রেও দেনমোহর আদায়ের উদ্দেশ্যে এই ধারায় মামলা হচ্ছে।
নারী নির্যাতন মামলা থানায় দায়ের করা সচরাচর কিন্তু থানা যদি কোন কারনে মামলা গ্রহন করতে অস্বীকার করেন তখন অভিযোগকারী আদালতে গিয়ে মামলা করেন।
মামলা যদি থানায় করে তখন করনীয়:
থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ কর্তৃক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার আশংকা থাকে কারণ এই মামলায় পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করতে পারে। সুতরাং মামলা হয়েছে এটা জানার পর পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে খুব দ্রুত হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে হবে। আগাম জামিন না নিলে অনেক সময় পুলিশ গ্রেফতার করার পর নির্যাতন করতে পারে।
আগাম জামিন নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে গিয়ে আবার জামিনের জন্য আবেদন করে জামিন নিতে হবে।
আগাম জামিন নেওয়ার পর মামলাটির ভিত্তি সাভাবিক ভাবেই খুব দুর্বল হয়ে যায়। আর মামলার ঘটনা যদি মিথ্যা হয় তাহলে মামলাটি বাতিল করার জন্য হাইকোর্ট আবেদন করতে হয়।
মামলাটি আদালতে দায়ের করা হলে:
মামলাটি আদালতে দায়ের করা হলে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনের কোন প্রয়োজন নেই। তখন সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির হওয়ার পর জামিন নিতে হবে। আদালত যদি জামিন নামঞ্জুর করে তাহলে হাইকোর্টে আসতে হবে।
জামিন নেওয়ার পর মামলাটি উত্তেজনাপূর্ণ হয়রানি মূলক বা মিথ্যা হলে হাইকোর্ট থেকে মামলা বাতিলের ব্যবস্থা নিতে হবে।
মামলা স্থানান্তর: মামলা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় স্থানান্তর করা যেতে পারে। আর তার জন্যও আপনাকে হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে।
হাইকোর্ট যদি মনে করেন যে মামলা কোনো ভিত্তি নেই তাহলে হাইকোর্টের মামলা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে।
বাংলাদেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরপরই তালাকদাতা ও তার পরিবারকে শাস্তি দিতে থানায় বা আদালতে মিথ্যা মামলা করার মত অনেক নজির রয়েছে।
শুরুতেই জানার চেস্টা করতে হবে মামলাটি থানায় না-কি কোর্টে পিটিশন আকারে হয়েছে। এর পর মামলার কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। মামলাটি যদি থানায় হয়, তাহলে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তালাকের কপিসহ মিথ্যা মামলার ডকুমেন্টসগুলো প্রদান করতে হবে। পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেন।
আর যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা তা না করে চার্জশিট দাখিল করেন, তাহলে বিচারিক আদালতে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে পারবেন। কোনো কারণে অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে হাইকোর্টে প্রতিকার চাইতে পারেন।
আর যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে সি.আর বা পিটিশন মামলা দায়ের হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আদালতে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন। ক্ষেত্র বিশেষে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আগাম জামিন নিতে পারেন।
যদি আপনার স্ত্রী বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য মিথ্যা যৌতুকের মামলা দায়ের করেন বা আপনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যৌতুকের মামলা দায়েরে সহায়তা করেন, তাহলে যে ব্যক্তি মিথ্যা যৌতুকের মামলা দায়ের করেন বা দায়ের করতে সহায়তা করেন তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। তবে এ মামলাটি করতে হবে যখন আপনি মিথ্যা মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস পাবেন। তারপর আদালতে আবেদনের মাধ্যমে মামলাটি করতে হবে। যৌতুক নিরোধ আইন ৬ ধারায় এ কথাগুলো স্পষ্ট করে বলা আছে।
মনে রাখবেন যে শুধুমাত্র স্ত্রী যৌতুকের জন্য মামলা করতে পারে এমন টা নয়, বরং স্ত্রী যদি আপনার কাছে যৌতুক দাবি করে, আপনিও যৌতুক নিরোধ আইনে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।
এবার জেনে নিই তালাকের পর আপনার স্ত্রী যৌতুক মামলা করলে সে মামলার ফলাফল কি হবে। যৌতুকের অপরাধ প্রমাণ করতে হলে ঘটনার তারিখ থেকে এক বৎসর কাল সময়ের মধ্যে যৌতুকের মামলা করতে হয়। উক্ত সময় অতিক্রান্তের পর মামলা রুজু করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনী হবে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ (এ) ধারামতে বাতিল যোগ্য বলে গন্য হবে। (১৬ বিএলডি, এডি, ১১৮)। এজন্য তালাক প্রাপ্তির পর মামলা হলে বাদীপক্ষকে মামলা সত্যতা প্রমাণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ
দন্ড বিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি পাল্টা মামলা করতে পারেন। এছাড়া দণ্ডবিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এই বিধান বলা হয়েছে যে, এই আইনের অন্য কোন ধারার অধীন কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোন আইনানুগ কারণ না জেনে যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন বা দায়ের করান, তবে অভিযোগকারীকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে অনধিক সাত বছর মেয়াদে বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত জরিমানায় দণ্ডিত হবেন. তাই ডিভোর্সের পর যদি মিথ্যা মামলার শিকার হন তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলা লড়ুন।
মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা
বিচারকরা বলছেন, নারী নির্যাতন বা যৌতুকের মামলার বাদীরা আইনজীবীদের পরামর্শে চিকিৎসকের কাছ থেকে আঘাতের মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে থাকেন। এরপর ওই সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি থানায় গিয়ে বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হন এমন স্থানীয় নোটারি পাবলিকের অফিস থেকে একটি হলফনামা সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক তার প্রবন্ধে বলেছেন, যৌতুক নিপীড়নের মামলায় অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের উপাদান থাকে না। মামলাগুলো আবার সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো সম্পর্ক না থাকলে স্ত্রী কোনো উপায় না পেয়ে দ্রুত প্রতিকার পাওয়ার আশায় স্বামী ও তার নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনের ১১(সি) ধারায় মামলা করে।
যারা পুরুষ নির্যাতন নিয়ে কাজ করেন তারা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী যারা মিথ্যা দাবি করে তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে; যা শুরু হয় ভুক্তভোগীর লিখিত আবেদনের মাধ্যমে। ভিকটিমদের আবেদন ছাড়াই যদি মামলাগুলো সরাসরি শনাক্ত করে বিচার করা যায়, তাহলে মিথ্যা মামলা অনেকাংশে কমে যাবে। তাই ১৭ নং ধারার যথাযথ প্রয়োগ ও সংশোধনের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা কমানো সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির ১৮ ধারা অনুযায়ী পুলিশি তদন্ত সঠিকভাবে হলে মিথ্যা মামলা কমানো সম্ভব। তদন্তে যারা গাফিলতি করবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মিথ্যা মামলার কারণে আইনজীবীকেও আইনের আওতায় আনলে নিরপরাধ মানুষ মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পাবে।
FAQ
যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা তা না করে চার্জশিট দাখিল করেন, তাহলে বিচারিক আদালতে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করতে পারবেন। কোনো কারণে অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে হাইকোর্টে প্রতিকার চাইতে পারেন। বিস্তারিত পড়ুনঃ নারী নির্যাতন মামলা থেকে বাচার উপায়
থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ কর্তৃক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার আশংকা থাকে কারণ এই মামলায় পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করতে পারে। সুতরাং মামলা হয়েছে এটা জানার পর পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে খুব দ্রুত হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে হবে। আগাম জামিন না নিলে অনেক সময় পুলিশ গ্রেফতার করার পর নির্যাতন করতে পারে। বিস্তারিত পড়ুনঃ নারী নির্যাতন মামলা থেকে বাচার উপায়
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এই বিধান বলা হয়েছে যে, এই আইনের অন্য কোন ধারার অধীন কোন ব্যক্তিকে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোন আইনানুগ কারণ না জেনে যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন বা দায়ের করান, তবে অভিযোগকারীকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে অনধিক সাত বছর মেয়াদে বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত জরিমানায় দণ্ডিত হবেন. তাই ডিভোর্সের পর যদি মিথ্যা মামলার শিকার হন তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলা লড়ুন।