খাবার দাবার ইসবগুলের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেকেই এই গাছের ভুসি খেয়ে থাকেন। পেট ঠাণ্ডা রাখা ছাড়াও অনেক সমস্যার সমাধানে ভালো ওষুধ হতে পারে ইসবগুলের ভুসি।
ইসবগুল এক ধরনের রেচক। এক টেবিল চামচ ইসবগুলে রয়েছে ক্যালোরি ৫৩%, চর্বি ০%, সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) ১৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৯ মিলিগ্রাম।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে এগুলো মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি হার্ট ও অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ইসবগুল। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে ইসবগুল গ্রহণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
![ইসবগুলের ভুষি উপকারীতা ও অপকারীতা কি?-Isabgoler Bhusi](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2021/03/advantages-and-disadvantages-of-eating-husk.jpg?resize=320%2C202&ssl=1)
আরও পড়ুনঃ
১১টি সমস্যার সমাধান করবে ইসুবগুলের ভুষি!!!
ইসুবগুলের ভুষি তৈরি হয় Plantago Ovate গাছের বীজ থেকে। এটি একটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ। প্রতি ১০০ গ্রাম ইসুবগুলের ভুষিতে রয়েছে ৭১ গ্রাম দ্রবণীয় ডাইটারি ফাইবার।
১। কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করেঃ
ইসুবগুলের ভুষি পাকস্থলীতে পানির সংস্পর্শে আসা মাত্র জেল তৈরি করে ও স্টুলের ভলিউম বৃদ্ধি করে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হলে ইসবগুল ৫-১০ গ্রাম নিয়ে ১ কাপ ঠান্ডা বা গরম পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন, ২-৩ চামচ চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খান। বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী। যারা দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা নিয়মিত ২ মাস এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন। পেট স্বাভাবিক থাকলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
পেট পরিষ্কার করতে এগুলো ওষুধের চেয়ে বহুগুণ বেশি উপকারী। হেমোরয়েড সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হয়। অর্শ কখনও কখনও ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগে পরিণত হতে পারে। এই ভুসিগুলি শুরু থেকেই এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে কার্যকর। ওষুধ পেট রাসায়নিক; এই ভুসি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের সুস্থ রাখে। প্রতি রাতে ভুসি খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করলে আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২। পেটের সমস্যা দূর করেঃ
পাকস্থলী ঠাণ্ডা বা শীতল রাখতে ও হজমের সমস্যা দূর করতে ইসুবগুলের তুলনা নেই। পেটব্যথার উপশম করে ইসুবগুলের ভুশির শরবত। এছাড়াও আই বি এস এর সমস্যা সমাধানে ভাল ফল দেয় ইসুবগুলের ভুষি। যারা আমাশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্যও ইসবগুল ভালো। যারা আমাশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্যও ইসবগুল ভালো।
৩। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
আহার গ্রহণের ৩০ মিনিট পূর্বে ১০ গ্রাম ইসুবগুলের ভুষি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেলে, খাওয়ার সময় অতিরিক্ত খদ্য গ্রহণের ইচ্ছা প্রশমিত করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৪। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ
ইসুবগুলের ভুষি একটি হাইপোকোলেস্টেরলিক ফুড, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ কমায় ও ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়াও এটি রক্তে ট্রাই-গ্লিসারাইডের পরিমাণ কমায়। ফলে হৃদরোগ ঝুঁকি কমে।
হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত ইসুবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। এটি পেটের দেয়ালে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। যা খাবার থেকে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়; বিশেষ করে, এটি রক্তের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি রক্ত থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল দূর করতেও কাজ করে। ফলে ধমনীতে ব্লক তৈরি হওয়ার ভয় থাকে না।
৬। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ
ইসুবগুলের মাত্রাধিক দ্রবণীয় ডাইটারি ফাইবার আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের খাদ্য শোষণ ভিলাইয়ের উপর এক জালকের সৃষ্টি করে ফলে ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ শোষিত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৭। ডাইরিয়া কমাতেঃ
ডাইরিয়ার সময় ইসুবগুলের ভুষি ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে অতিরিক্ত পানি শুষে নেয় ও স্টুলকে ঘন করে ও বারা বার টয়লেটে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।
ইসুবগুলের ভুষি আমাশয়ের জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করতে পারে না, তবে তারা তাদের বের করে দিতে পারে। তাই আমাশয় রোগীরা সকালে ও রাতে এক গ্লাস ইসবগুলের শরবত পান করলে উপকার পাবেন। আমাশয় সারাতে ওষুধ খেলে পেটের ভেতরে জীবাণু মারা যায় কিন্তু শরীর থেকে বের হয় না; যার কারণে আবার আমাশয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৮। অর্শরোগেঃ
কোষ্ঠবদ্ধতা অর্শরোগের প্রধান কারণ। তাই অর্শরোগীরা নিয়মিত ইসুবগুলের ভুষি খেলে ভাল উপকার পাবেন।
৯। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াঃ
যেকোনো কারণে প্রস্রাব হলুদ হয়ে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে, ইসবগুলের ভুসি তা সারাতে সাহায্য করে।
যাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আছে তারা সকাল-বিকাল শরবতের সাখথ ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমে যাবে এবং প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হবে। হাত, পা ও ভার্টিগোর ক্ষেত্রে আখের গুড় ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে এক সপ্তাহ সকাল-বিকাল খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
১০। যৌনতা বৃদ্ধি করতেঃ
প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে মধু ও ইসুবগুলের ভুষি মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেলে যৌনতা বৃদ্ধি পায়।
১১। হাত পা জ্বালাপোড়াঃ
মাথা ঘোরা বা হাত- পা জ্বালাপোড়া হলে এক গ্লাস আখের গুড়ের শরবতের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ
ইসবগুল যেসব সমস্যায় কার্যকরী :
১. পেট ব্যথা দূরীকরণে ইসবগুলের ভূমিকা অনন্য। এর মিউসিলেজিনাস এর কারণে আলসারজনিত পেট ব্যথা কম অনুভূত হয়।
২. ইসবগুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে দুই বা তিন চামচ ইসবগুল মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।
৩. আশসমৃদ্ধ খাবার ইসবগুল। আমাশয় কিংবা অর্শ রোগ দূর করতে ইসবগুল দই এর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
৪. হজমের সমস্যার রোগীদের জন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ইসবগুল বিশেষ উপকারী।
৫. কোলেস্টেরল ও উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং ওজন কমাতে ইসবগুল দারুণ পথ্য।
৬. ইসবগুলের ভুসিতে আছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান। যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাক্সগার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে রক্তে সহজে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না। এর ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।
৭. এই ভুসিতে ফাইবার উপস্থিতি থাকায় হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়। এতে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমে
আরও পড়ুনঃ
শেষ কথা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসবগুল সেবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। ইসবগুল দিনে ৩ বার ১ টেবিল চামচ খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই পানিতে মেশায়ে খেতে হবে। এছাড়াও, সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।