এমিবিক আমাশয়: পাচনতন্ত্রের বৃহৎ অন্ত্রে এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক একটি পরজীবীর সংক্রমণের কারণে এমিবিক আমাশয় হয়।
পরজীবীটি দূষিত পানি এবং অপরিষ্কার খাবারের মাধ্যমে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে এবং বৃহৎ অন্ত্রের সেপ্টামের নিকটবর্তী স্থানে ভ্রমণ করে, এর বাইরের আস্তরণ অপসারণ করে। পরজীবী তারপর কোলন উপর মিউকাস ঝিল্লি দখল. এ সময় পরজীবীর শরীর থেকে এক ধরনের ক্ষতিকর রস নিঃসৃত হয় যা মিউকাস মেমব্রেন ভেঙে দেয়। আর এই ভেঙ্গে যাওয়া শ্লেষ্মাঝিল্লিতে এ্যমিবার আক্রমণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়৷
এমিবিক আমাশয় লক্ষণ ও উপসর্গ:
রোগীর ঘনঘন পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায় (সাধারণত দিনে ১০ বারের মত) । মলের সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আম বেশি বেশি ঝরতে থাকে। রক্ত থাকলেও তা কম দেখা যায়৷ এবং ক্রমাগত তলপেটে ডানদিকের চিনচিন ব্যথা অনুভব হয়৷
এমিবিক আমাশয় চিকিৎসা
আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল (৪০০ মিলিগ্রাম) দিনে ৩ বার (বয়স্কদের ক্ষেত্রে) খেতে হবে। বাচ্চাদের ওজন অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মনে রাখবেন এখানে শুধুমাত্র ধারণাগত ওষুধের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ডাক্তারের পরীক্ষা ও পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ খাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
এমিবিক আমাশয় কোন অনুজীবের কারণে হয় উওর
এন্টামিবা নামক এক ধরনের এককোষী প্রাণী তথা এমেবিক আমাশয় এন্ট্যামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক অণুজীবের কারণে ঘটে থাকে।
অর্থাৎ এমিবিক/অ্যামেবিক আমাশয় হল জীবাণুঘটিত সংক্রমণ একটি রোগ যা এন্টামিবা হিস্টোলিটিকা (Entamoeba Histolytica ) প্রটোজোয়ান নামক জীব থেকে হয়ে থাকে। অ্যান্টামিবা বৃহদন্ত্রে বসবাস করে এবং সেখানকার প্রাচীর গাত্র থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে থাকে। এতে সেই যায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে মলের সঙ্গে প্রচুর মিউকাস ও রক্ত ঝরে যায়।
এমিবিক আমাশয় কোন বয়সের মানুষেয় হয়
অ্যামিবা ঘটিত এমিবিক/অ্যামেবিক আমাশয় (Amoebic dysentery, Amoebiasis) অন্য আমাশয় এর মত একে বারে ছোট শিশুদের মধ্যে কম দেখা যায়। এটি একটু বড় ছেলে-মেয়েদের অক্রান্ত হতে দেখা যায়। ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্ছাদের মধ্যে এমিবিক/অ্যামেবিক আমাশয় প্রবণতা অত্যন্ত কম দেখা যায়৷ পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রে এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামক পরজীবীর সংক্রামণের ফলে এমিবিক/অ্যামেবিক আমাশয় হয়৷
এ রোগে অক্রান্ত রোগীদের বারবার পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। মলের সঙ্গে মিউকাস (শ্লেষ্মাঝিল্লি) বা আম বেশি ঝরতে দেখা যায়। রক্ত ঝরলেও কম দেখা যায়৷ এ রোগে অক্রান্ত রোগীদের সাধারণত ডানদিকের তলপেটে ব্যথা হয়৷
আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
এমিবিক আমাশয় প্রতিরোধের উপায়
এমিবিক আমাশয় বা যে কোন আমাশয় প্রতিরোধের করতে হলেপ্রথমে জানতে হবে আমাশয় কি এবং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারন গুলো কি কি? তাহলে চলুন আগে জেনে নেই আমাশয় কি?
আমাশয় কি?
তরল, এবং বিশেষ করে জল, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য। যেহেতু আমাশয় একটি সংক্রামক রোগ যা গুরুতর ডায়রিয়ার সাথে যুক্ত। ভারত, বাংলাদেশ সহ অনেক দেশে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি সাধারণত হালকা হয় এবং সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশীরভাগ লোকই চিকিৎসার খোঁজ করে না।
এটি বিশ্বব্যাপী একটি উল্লেখযোগ্য রোগ। প্রতি বছর শিগেলা সংক্রমণের ১২০ মিলিয়ন থেকে ১৮৫ মিলিয়নের মধ্যে ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ১ মিলিয়ন মারাত্মক রকমের হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, এই রোগে মৃত্যুর ৬০% শতাংশেরও বেশি যা ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের হয়।
এমিবিক আমাশয় পরজীবী সংক্রমণের কারণ
এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা নামীয় এক ধরনের পরজীবী যেটি নিজের চারদিকে এক ধরনের আবরণ তৈরী করে এবং মাটিতে ও পানিতে বিচরণ করে৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা জিবানুটি দূষিত পানি এবং অপরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের পেটের মধ্যে খুব সহজে ঢুকে পড়ে এবং বৃহদান্ত্রের সিকামের কাছাকাছি জায়গায় যায় এব সেখনে গিয়ে তার বাইরের আবরণটি খুলে ফেলে৷
এরপর পরজীবীটি বৃহদান্ত্রের গায়ে যে শ্লেষ্মাঝিল্লি আছে তা আকড়ে ধরে বসবাসের জন্য বাসা বাঁধে। এবং এই ক্ষতি কারক পরজীবীটির দেহ থেকে এক ধরনের ক্ষতিকারক রস নিঃসরণ হয় যা মানব দেহের অন্ত্রে গাত্রের শ্লেষ্মাঝিল্লিকে ভেঙে দিয়ে দেয়। আর এই ভেঙ্গে যাওয়া শ্লেষ্মাঝিল্লিতে এ্যমিবার আক্রমণের জন্য ক্ষতের সৃষ্টি হয় থাকে৷
পরে শ্লেষ্মাঝিল্লির ঝরে পড়া ভেঙ্গে যাওয়া অংশ মলের সঙ্গে নিঃসৃত হয় যাকে “আম” বলে আখ্যায়িত করি। অক্রান্ত রোগিদের তলপেটে সাধারণত ডানপাশে হালকা চিনচিনে ব্যথা অনভব করে৷ আর তলপেটের ডান পাশে সিকাম (সিকাম বৃহদন্ত্রের অঙ্গের অংশ) থাকে যা পরজীবীটির আক্রমণের মূল লক্ষ্য।
আরও পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম
আমাশয় প্রতিরোধের উপায়
ডা. আবেদা কুদসী নওশী বলেন আমাশয় হলে স্যালাইন ও বিশ্রাম নিতে হয়। ভালো ঠাণ্ডা পানি, চিনির শরবত, নারকেলের পানি, ফলের রস ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। অতিরিক্ত পাতলা মল হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়: অ্যামিবিক আমাশয় এবং ব্যাসিলারি আমাশয় উভয়ই স্বল্পমেয়াদী আমাশয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ‘স্বল্পমেয়াদী আমাশয়’ হল এক সপ্তাহের কম স্থায়ী আমাশয়। স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসায় স্বল্পমেয়াদী আমাশয় সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বা দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় অনেক দিনের চিকিৎসার প্রয়োজন।
দীর্ঘদিনের আমাশয় সমস্যা বিভিন্ন জটিলতার জন্ম দিয়ে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলধার সর্বদায় একটু ফাঁক হয়ে থাকে। তবে আমাশয় নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক চিকিৎসা এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে আমাশয় রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার করা সম্ভব।
আমাদের আরও পোস্টঃ চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়