শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম

সন্তানের জন্মের পরপরই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের দুধ শিশুর প্রথম খাবার হওয়া উচিত। জন্মের পরে, অনেকে শিশুর মুখে চিনি এবং মিছরি পানি বা মধু তুলে দেন। এটা ঠিক না।  এতে শিশু সেই সময়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া শিশুর পরিপাকতন্ত্র মধুর মতো খাবার হজমের উপযুক্ত থাকে না। তাই এতে কিছুটা বিপত্তির ঝুঁকি থাকে।

 আরও পড়ুন : ইসবগুলের ভুষি উপকারীতা ও অপকারীতা কি? – Isabgoler Bhusi

নবজাতক জন্মের পর ‘বুকের দুধ’ খায় না কেন ? শালদুধ কি?

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়মনবজাতক জন্মের পর পরই বুকের দুধ টানতে চায় না। তবে আসতে আসতে অভ্যাস করাতে হবে। জন্মের প্রথম দুই-তিনদিন শিশু যে দুধ পায় তার নাম শালদুধ। এই শালদুধ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রস্তুত করবে তাই এই শালদুধ শিশুর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ । আর এই  শালদুধকে শিশুর প্রথম টিকা বলা হয় ।  কোষ্ঠকাঠিন্য এবং জন্ডিস থেকে শিশুকে রক্ষা করে এই শালদুধ। তাই জন্মের পর ০৪ ঘণ্টা থেকে০৬ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া উত্তম।

ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নবজাতকের বুকের দুধ দিন

ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নবজাতকের জন্য মায়ের দুধই একমাত্র এবং আদর্শ খাবার। ছয় মাস থেকে শিশুকে তার পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অর্থাৎ স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মায়ের দুধ ছাড়াও পরিপূরক খাবার দিতে হবে। তবে দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। মায়ের দুধে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়া জন্মের পর যে হলুদ রঙের দুধ নিঃসৃত হয় তা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বুকের দুধ হজম করা সহজ, বিশুদ্ধ এবং এতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা যেকোনো সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, স্থূলতা, টাইপ-1 ডায়াবেটিস, ওটিটিস মিডিয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা (ডায়রিয়া, বমি), এবং সেপসিস (আকস্মিক শিশু মৃত্যু সিন্ড্রোম) হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ান তাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্তন এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু বাজারে যেসব শিশুর খাবার পাওয়া যায় সেগুলো মায়ের দুধের মতো সুরক্ষা দেয় না। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

যেভাবে বুকের বুকের দুধ খাওয়াবেন

নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

১। নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করতে মাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে।

২। মাকে প্রতিটি খাওয়ানোর আগে এক থেকে দুই গ্লাস জল বা তরল খাবার পান করা উচিত।

৩। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কোন তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। শান্ত বোধ করুন, ধৈর্য ধরে খান।

৪। বসে বসে খেতে চাইলে মায়ের পিঠে ও কোলের নিচে বালিশ দিয়ে আরাম করে বসতে হবে। শুয়ে থাকা শিশুকে খাওয়াতে চাইলে এমনভাবে মায়ের দিকে মুখ করে শুয়ে থাকতে হবে যাতে মা তার হাত দিয়ে শিশুকে পিঠ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন।

৫। শিশুর নাকে যাতে চাপ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৬। প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় একটি স্তন থেকে ভালোভাবে খাওয়ানো উচিত। কারণ, প্রথমে পাতলা এবং পরে ঘন দুধ বের হয়।

৭। টানা দুই ঘণ্টা শিশুকে বুকের দুধ দিতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় একটানা চার ঘণ্টা বিরতি নিলেও কোনো সমস্যা নেই।

আমাদের আরও পোস্টঃ

মায়ের বুকের দুধ কতক্ষণ সংরক্ষণ করা যায়

৮। কর্মজীবী ​​মায়েরা শিশুকে সঠিক সময়ে খাওয়ানোর জন্য স্তন ছেকে দুধ সংরক্ষন করতে পারেন যাতে কাজের সমযেও মায়ের দুধের অভাব বোধ না হয় শিশুর। সেক্ষেত্রে, আপনি যখনই কাজ থেকে ফিরবেন দুধ পাম্প করবেন এবং ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন। তবে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা দুধ বের করে শিশুকে দেওয়া যাবে না। দুধের পাত্রটি একটি পাত্রে গরম পানিতে রেখে ঝাঁকিয়ে নিন যাতে তা শিশুর খেতে সহনীয় হয়।

৯। মা যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন এবং মাস্ক পরে শিশুকে দুধ দিন।

শিশুকে কীভাবে কখন বুকের দুধ দেবেন?

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জাগার পরপরই শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া উচিৎ। অনেকের শিশুকে কখন বুকের দুধ দেবেন? কীভাবে দেবেন? এ নিয়ে ভাবনার শেষ নাই। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা। অর্থাত্, যখনই শিশু ক্ষুধার্ত হয় বা ক্ষুধার কারণে কান্নাকাটি করে বা দীর্ঘ সময় ঘুমের পরে জেগে ওঠে তখনি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দেওয়ার ভালো। তবে শিশুরা সাধারণত ০২ঘণ্টা  বা  ০৩ ঘণ্টা পর খেতে চায়। প্রতিবারে খাওয়ানো সময় 10 থেকে 15 মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয় ।। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চাকে মাথা উচু করে নিয়ে বা কোলে নিয়ে খাওয়ানো উচিত। চিৎ করে শুইয়ে খাওয়ানোর ঠিক নয়। শুয়ে খাওয়ানোর কারণে দুধটি মুখ দিয়ে কানে যেতে পারে কা এবং কান পেকে যেতে পারে।

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখটি মায়ের স্তনবৃন্ত বা কালো অংশের বেশিরভাগ অংশ cover করে দেবে এবং ঠোঁট বাইরে থাকবে। প্রথমে যদি বাচ্চা দুধ পান করতে না চায় তবে প্রয়োজনে মা তার হাত দিয়ে বাচ্চার ঠোঁটে কিছুটা দুধ দিতে পারেন। স্তনবৃন্ত যদি শিশুর মুখ স্পর্শ করে তবে শিশুটি দুধের সন্ধান করবে। তবে আপনার তাড়াহুড়া করা উচিত নয়, শিশু মুখ হ্যাঁ করলেই আপনার খাওয়া উচিত।

শিশুর জন্মের পরে মায়ের বুকের দুধ না থাকলে করনিয় কি ?

প্রমমে বলতে চাই মায়ের বুকের দুধ তৈরির একমাত্র উপায় শিশুর মাধ্যম বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমেই তৈরী হবে।। ফর্মুলা দুধ শিশুকে দেওয়া ঠিক না। কারণ শিশু দুধ না টানলে বুকের দুধ নামবে না। এবং আসতে আসতে মায়ের দুধকে আরও কমিয়ে দিবে এবং শিশুর বুকের দুধ থেকেও বঞ্চিত হবে। জন্মের প্রথম দিনটিতে অনেক সময় নানা কারণে নবজাতক পর্যাপ্ত বুকের দুধ নাও পেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে উদগ্রীব হওয়ার কিছু নেই। এই সময় উদ্বেগের কারণে অনেকে শিশুর মুখে ফিডারে বা প্যাকেটজাত দুধ তুলে দেয় যোটা একদম ঠিক না। এ সময়ে কৌটার দুধ যদি দিতেই হয়, তারপরও ফিডারে দেয়া ঠিক হবে না।  আপনাকে এটি চামচ করে দিতে হবে, তাও কেবল সেদিনের জন্য । এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কিছু করা ঠিক হবে নয়।

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য খাবার

কিছু খাবার আছে যা দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে পারে। এখানে কিছু খাবার রয়েছে যা বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে পারে।

১. মেথি বীজ: মেথি বীজ বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ানোর একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপায়। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে মেথির বীজ বুকের দুধ উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। এই বীজগুলিতে হরমোনের পূর্বসূরি রয়েছে যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে পারে, তবে গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন যে এটি কীভাবে ঘটে। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে মেথির বীজ দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে পারে কারণ স্তনে মিষ্টি গ্রন্থি পরিবর্তিত হয়েছে। এই বীজ খাওয়ার 24 থেকে 72 ঘন্টার মধ্যে স্তনে দুধের পরিমাণ বেড়ে যায়। একটি 2016 পর্যালোচনা সমীক্ষা মেথি বীজের এই সুবিধাকে সমর্থন করে। আপনি মেথি চা পান করতে পারেন বা ডাক্তারের পরামর্শে মেথির পরিপূরক / মেথি ক্যাপসুল খেতে পারেন।

২. ফল এবং শাকসবজি: বেশি করে তাজা ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, এর একটি সুবিধা হল এই খাবারগুলি বুকের দুধ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। বেবি অ্যান্ড কোম্পানির সিএনএম ডিএনপি মার্গারেট বাক্সটন বলেছেন: ফল এবং শাকসবজি শরীরের দুধ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। আপনার স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আপনি আপনার সালাদ, স্ন্যাকস এবং রেসিপিগুলিতে বিভিন্ন ধরণের ফল এবং শাকসবজি যোগ করতে পারেন।

৩. জল: ডঃ বক্সটন স্তন্যপান করান এমন মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে জল পান করার পরামর্শ দেন, কারণ বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের শরীর থেকে প্রচুর জল সরিয়ে দেয়। “স্তন্যপান করালে চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বা কোমল পানীয়ের পরিবর্তে জল দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো উচিত,” তিনি বলেন। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করতে হবে। প্রতিবার আপনার শিশুকে খাওয়ানোর সময় এক গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন। আপনি যদি পর্যাপ্ত জল পান না করেন তবে আপনি মেথির উপকারিতা পাবেন না। ‘

৪. হার্বাল চা: অ্যাক্ট ন্যাচারাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেসের নোটারি পাবলিক পাম পিন্টো বলেছেন: “ভেষজ চা পান করলে অনেক রোগ নিরাময় হয় এবং কিছু ভেষজ চা দুধ উৎপাদন এবং শক্তির মাত্রা বাড়াতে পারে।” নেটটল টি। নেটলে উচ্চ মাত্রার আয়রন থাকে, যা ক্লান্তি দূর করে। এই ভেষজটি দুধ উৎপাদনেও ভূমিকা রাখতে পারে।

৫. মৌরি: মৌরি সালাদ, মৌরি বীজ, মৌরি স্যুপ এবং মৌরি রেসিপি – আপনি যেভাবেই খান না কেন, এই ভেষজটি স্তন্যপান বা দুধ উৎপাদন বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে। নোটারি পাম পিন্টো বলেন, ‘আপনি যদি আপনার স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়াতে চান, তাহলে আপনি সালাদে কাঁচা মৌরি যোগ করতে পারেন বা অন্য সবজির সঙ্গে রান্না করে খেতে পারেন। এই স্বাদ-সমৃদ্ধ ভেষজ থেকে স্তন্যদানের সুবিধা পাওয়ার আরেকটি উপায় হল মৌরি বীজ চা বা মৌরি বীজ চা পান করা। ‘

৬. গরম মশলা: গরম মশলা সবজির একটি জনপ্রিয় উপাদান। গরম মশলা হল বিভিন্ন মশলার মিশ্রণ যা তরকারিতে ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়। গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে বীজ, জিরা, মৌরি বীজ, জায়ফল এবং তেজপাতা দিয়ে আপনি বাড়িতে আপনার নিজের গরম মশলা তৈরি করতে পারেন। মশলার এই মিশ্রণের রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটিকে গরম মশলা বলা হয় কারণ এটি শরীরকে গরম করতে পারে। আপনার স্তনে দুধের পরিমাণ বাড়াতে তরকারিতে গরম মশলার পরিমাণ বাড়াতে পারেন। “গরম মশলা শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করতে পারে,” বলেছেন এনওয়াইসি সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েটসের সার্জন রায়ান নিনস্টাইন৷ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মশলার এই মিশ্রণ দুধ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে পারে।

বুকের দুধ কি সত্যিই কম?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নবজাতকের কান্নাকে ক্ষুধার জন্য কান্না হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু এটা সত্য না. যখনই কোন অস্বস্তি বা কষ্ট হয় তখনই নবজাতক কাঁদে। পেটে ব্যথা, ভেজা কাপড়, ঠাণ্ডা ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু নবজাতকের কান্না। কাপড়ের ঘষার কারণে নবজাতকের ত্বকও কাঁদতে পারে যা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এমনকি শিশুটি তার কোলে উঠার জন্য কাঁদে। অতএব, যখন একটি শিশু কান্নাকাটি করে, তখন কেবল খাওয়াই নয়, অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চা কি সত্যিই কম দুধ পাচ্ছে?

কিছু ক্ষেত্রে শিশু আসলে পর্যাপ্ত দুধ নাও পেতে পারে। তাদের চিনতে হবে। আর কোনো সমস্যা থাকলে তার সমাধান করতে হবে। আপনার নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি আছে কিনা তা দেখুন:

1. শিশু সারা দিনে কমপক্ষে 7-8 বার প্রস্রাব করে কিনা। তা না হলে, শিশু পর্যাপ্ত দুধ নাও পেতে পারে। তবে উল্লেখ্য যে নবজাতক জন্মের পর প্রথম দুই দিন প্রস্রাব নাও করতে পারে। এই স্বাভাবিক.

2. শিশুর ওজন বাড়ছে কিনা। জন্মের পর প্রথম ৭ দিন শিশুর ওজন কমে। তবে এরপর থেকে ক্রমাগত ওজন বাড়তে থাকে। এটা না বাড়লে হয়তো পর্যাপ্ত দুধ পাওয়া যাবে না।

3. বাচ্চা অনেক কাঁদে। দুধ ঠিকমত খায় এবং শান্ত থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার কাঁদতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মায়েরা মাঝে মাঝে একবার বুকের দুধ খাওয়ান। ফলে শিশুর প্রাপ্ত দুধের পরিমাণ ঠিক থাকলেও দুটি স্তন সামনের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে পাতলা দুধ (ফোরমিল্ক) পায়। আর পিঠে দুধ পায় না। ফলে কিছুক্ষণ পর শিশু আবার ক্ষুধার্ত হয় এবং কাঁদতে থাকে।

এই লক্ষণগুলো থাকলে ধরে নেওয়া যেতে পারে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না। কেন শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না বা কেন মা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছেন না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে ভেতরে ভেতরে একটু জেনে নিলে উপকার হবে।

শিশুকে ফিডার দুধ খাওয়ানো কি ঠিক ?

প্রথম দিন শিশুকে ফিডার দিলে সেই শিশু পরবর্তীকালে আর বুকের দুধ টানতে চায় না। কারণ, ফিডারের চেয়ে বুকের দুধ টেনে পান করাটা তার কাছে কষ্টসাধ্য মনে হয়। এ জন্য শিশুকে ফিডারের অভ্যাস না করাই ভালো। এ ছাড়া ফিডারের জন্য পেটের পীড়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বুকের দুধ’এ সেই রকম ঝুঁকি নেই বললেই চলে। প্রতিবার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পর কাঁধের উপরে মাথা রেখে শিশুটিকে উপুর দিকে রাখতে হবে এবং পিঠে হালকাভাবে থাপ্পর মারতে হবে। কিছুক্ষণ এভাবে করার পর শিশু ঢেঁকুর তুলবে। ঢেঁকুর তোলার পর শিশুকে শুইয়ে দিতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত এই কাজটি করেন তাহলে খাওয়ার পরে শিশুর বমি হবে না

নবজাতকের জন্য বুকের দুধ একটি ভাল প্রাকৃতিক খাবার। শিশুর জন্মের পরে প্রথম ছয় মাস, চিকিৎসকরা কেবলমাত্র তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বুকের দুধ শিশুর সম্পূর্ণ পুষ্টি চাহিদা সরবরাহ করে। তবে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো খুব জরুরি। আজকের মত এখানেই কথা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।

আরও পড়ুন : নারি পুরুষ যৌন রোগের হোমিওপ্যাথি কার্যকরী ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে আল কোরআনের নির্দেশ

জন্মের পর শিশুর জন্য বুকের দুধ সবচেয়ে ভালো খাবার। আল্লাহ প্রত্যেক নবজাতক শিশুর জন্য বুকের দুধ সৃষ্টি করেন। যা হালকা মিষ্টি এবং উষ্ণ; যা নবজাতক শিশুর নাজুক অবস্থার জন্য বিশেষ উপকারী।

নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়াতে উৎসাহিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা স্তন্যপান করানো এবং গর্ভবতী মহিলাদের থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও মিশকাত)

দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়ার গুরুত্ব ঘোষণা করেছে। নবজাতক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।

সূরা লুকমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট স্বীকার করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। তারপর দুই বছরের মধ্যে তার দুধ ছাড়ানো হয়। ‘

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ দিবেন। (সূরা বাকারা: আয়াত 233)

কুরআন ও হাদীসের আলোচনা থেকে বোঝা যায়-
স্তন্যপান করানোর সময়সীমা চান্দ্র মাস অনুসারে জন্ম থেকে পূর্ণ দুই বছর। শিশুর প্রয়োজন হলে এই সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে।

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির ট্যাবলেট

ডাক্তাররা প্রায়ই বুকের দুধ বাড়াতে ডমপেরিডোন ম্যালেরিয়া গ্রুপের ওষুধের পরামর্শ দেন। এই গ্রুপের বিভিন্ন ওষুধ হল অ্যামিডন, ডন এ, পেরিডন ইত্যাদি। এই ওষুধগুলি আসলে বুকের দুধ বৃদ্ধির ওষুধ নয়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলো গ্রহণ করলে আপনার ক্ষুধা বাড়বে। এতে বুকের দুধও বাড়ে। অনেক চিকিত্সক প্রায়ই ডম্পেরিডোন গ্রুপের ওষুধ ছাড়াই মুমভিট ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়াও আরও কিছু ট্যাবলেট পাওয়া যায় যেগুলো হলো –

Urtica Urens বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার ওষুধ। রিসিনাস কমিউনিস; রেজিনাস মেডিসিনকে বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উচ্চতর বলে দাবি করা হয়। এটি এমনকি কুমারী এবং বিধবাদের স্তনে দুধ আনতে পারে।

Pulsatilla Pratensis: ঔষধটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকের দুধ বাড়াতে পারে। যারা ঠান্ডা মেজাজের এবং যাদের অল্পতে চোখে জল আসে তাদের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

অন্যদিকে, বুকের দুধ কমাতে বা ডিহাইড্রেট করতে, যেকোনো একটি ওষুধ (Chionanthus Virginica, Fragaria Vesca, Lac Caninum) (30 বা 200 শক্তি) দিনে তিনবার কয়েক দিনের জন্য খান।

মনে রাখবেন জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। এখানে শুধু ওষুধ না গুলো দেওয়া হলো খাওয়ানোর কথা বলা হয় নি।

সর্বোপরি, বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য ওষুধ খাওয়ার চেয়ে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে বুকের দুধ বাড়ানো ভালো। এটা মায়ের শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি সন্তানের জন্যও ভালো।

(এখন বিস্তারিত জানার সময় না থাকলে, শুরুতে দেওয়া তালিকা থেকে ক্লিক বা স্পর্শ করে কারণ ও সমাধান দেখতে পারেন)।

Sharing Is Caring:

আমি জিয়ারুল কবির লিটন, একজন বহুমুখী ব্লগার, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, জীবনধারা এবং ইসলামিক বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির প্রতি অনুরাগী। আমি কঠোর অন্বেষণ, অনুসন্ধান, তত্ত্বানুসন্ধান ও অনলাইনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে আমার আকর্ষক লেখার এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ব্লগের মাধ্যমে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং ইতিবাচকতা দিক গুলো নির্ভুল ভাবে সবার সাথে ভাগ করে চলার চেষ্ট করছি।

Leave a Comment