অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা pdf

অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি বা দলিল যা ব্যবসা সঠিক ভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এটি অংশীদারদের মধ্যে দায়িত্ব, অধিকার এবং দায়বদ্ধতা সুনির্দিষ্ট ভাবে তুলে ধরে। যে কারনে কোন প্রকার আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করে। এই নিবন্ধে, আমরা ধাপে ধাপে অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম এবং একটি পূর্ণাঙ্গ নমুনা pdf ও word ফরমেটে ডাউনলোড করার জন্য লিংক প্রদান করেছি।

এখানে আমরা আপনাদের সহজ করে বুঝানোর জন্য প্রথমে টেক্স আকাড়ে দিলাম আপনি চাইলে এখান থেকে করি করতে পারেন। অথবা নিচে pdf ও docx ফরমেটে দিয়েছে সেখান থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা pdf
অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা pdf

আরও পড়ুনঃ-

  1. ব্যবসায়িক চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম PDF
  2. নগদ টাকা ধারের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম PDF
  3. অঙ্গীকারনামা-চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ও নমুনা
                                                         বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

                                                                 অংশীদারী চুক্তিপত্র

(নাম লিখুন), পিতা- মো:ফজলুর রহমান, মাতা- হিরা বেগম, ঠিকানা- গ্রাম: ভবানীপুর, পোষ্ট:ওয়ালিয়া, থানা: বড়াইগ্রাম, জেলা: নাটোর, ধর্ম-ইসলাম, জন্ম তারিখ: ১০ই ডিসেম্বর ১৯৯১, জাতীয়তা-বাংলাদেশী ।
                                                                                                                     ______________১ম পক্ষ 
(নাম লিখুন), স্বামী- রুহুল আমিন, মাতা- মোসা: হালিমা খাতুন, ঠিকানা- গ্রাম: মালিফা( খানপাড়া), পোষ্ট: রাইপুর ক্ষেতুপাড়া, থানা: সুজানগর, জেলা: পাবনা । ধর্ম- ইসলাম, জন্ম তারিখ: ১৪ই জুন ১৯৯১, জাতীয়তা-বাংলাদেশী ।
                                                                                                                   _______________২য় পক্ষ


          মহান আল্লাহর নামে অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্র সম্পাদনার্থে শুরু করিতেছি যে, আমরা পক্ষগণ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মান (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান) সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী সহ ব্যবসা করিবার জন্য পরস্পর পরস্পরের সহিত আলোচনার ভিত্তিতে সম্মত ও ঐক্যমতে উপনীত হইয়া নিম্ন শর্তাদি সাপেক্ষে অত্র পার্টনারশীপ বা অংশীদারী ব্যবসার দলিল সম্পাদন করিলাম ।

                                                                    চলমানঃ- ২


  
                                                                     পাতা- ০২
১। ব্যবসার নাম ও ঠিকানাঃ- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম হইবে “প্রতিষ্ঠানের নাম লিখুন ”, এবং ইহার বর্তমান অফিস হইবে বাড়ী : ২৮ ( নিচতলা), রোড: ০৯, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত ঢাকা । তবে ভবিষ্যতে পক্ষগণের সর্ব সম্মতির ভিত্তিতে অংশীদারী ব্যবসার প্রয়োজনে অফিস স্থানান্তর করা যাইবে কিংবা শাখা অফিস খোলা যাইবে ।

২। ব্যবসায়ের ধরনঃ- নির্মান (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান) এর সকল কার্যক্রম যেমন: আরসিসি কাঠামো ,স্টিল কাঠামো . ইত্যাদি । ইহা ছাড়াও, পক্ষগণ ভবিষ্যতে একমত হইয়া সর্বসম্মতভাবে যে কোন বৈধ ব্যবসা করিতে পারিবে।

৩। মেয়াদকালঃ- অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্র অদ্য সম্পাদনের তারিখ (২১শে ডিসেম্বর ২০১৫) হইতে কার্যকর হইবে এবং তাহা পক্ষগনের সম্মতির ভিত্তিতে অবসায়ন না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকিবে ।
৪। ব্যবসার মুলধনঃ- ব্যবসার প্রয়োজন অনুসারে ১মপক্ষ ৪৯% এবং দ্বিতীয় পক্ষ ৫১% টাকা বিনীয়োগ করবেন । অর্থাৎ অংশীদারী ব্যবসায় যথাক্রমে ১ম পক্ষ ৪৯% এবং, ২য় পক্ষ ৫১% মালিকানা প্রাপ্ত হইলেন ৷


                                                                     চলমানঃ ০৩



                                                                     পাতা- ০৩
৫। ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহনঃ- ব্যবসার প্রয়োজনের কোম্পানী যে কোন ব্যক্তি, ব্যাংক বা অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান হইতে ঋণ/ বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করিতে পারিবেন । ঋণ/বিনিয়োগের দায়ভার চুক্তিপত্রের পক্ষগণ তাহাদের মালিকানার আনুপাতিক হারে বহন করিতে বাধ্য থাকিবেন ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে হইবে।

৬। দায় দেনাঃ-- পক্ষগণ তাহাদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের অনুমাতে অর্থাৎ ১মপক্ষ ৪৯% এবং দ্বিতীয় পক্ষ ৫১% টাকা অনুপাতে ব্যবসার দায় -দেনা ও লাভক্ষতির দায়িত্বভার বহণ করিবেন। তবে, বর্তমান পার্টনারের বিনিয়োগ প্রত্যাহারে বা পূনঃ বিনিয়োগে কিংবা নতুন পার্টনারের বিনিয়োগে উল্লেখিত অনুপাত পরিবর্তন হইতে পারে। পক্ষগণের মধ্যে কোনপক্ষ যদি অত্র অংশীদারী প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষভাবে সার্বক্ষনিক পরিচালনায় নিয়োজিত থাকেন, সেইক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে তাহার/তাদের বেতন ও সুবিধা নির্ধারণ করা হইবে।

৭। লাভ লোকসান বন্টনঃ-- অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্র সম্পাদনের পর হইতে ৬ (ছয়) মাস অন্তর অন্তর বৎসরে দুই বার বা পার্টনারদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসার আয়-ব্যয় ও হিসাব নিকাশ সমাপ্ত করিয়া পার্টনারগনের মধ্যে লাভ লোকসান বন্টন করা হইবে অথবা লাভ-লোকসান মূলধনের সহিত সমন্বয় করা যাইবে ।
                                                     চলমানঃ- ০৪


                                                      পাতা- ০৫
১০। রেকর্ড পত্রঃ- ব্যবসার হিসাব নিকাশ এর সুবিধার্থে এবং অনুরূপ ভাবে হিসাব-নিকাশ রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের নামে ক্যাশ মেমো, ডেলিভারী চালান, লেজার বই, ক্যাশ
বই, দৈনন্দির হিসাবের বই ও ভাউচার ইত্যাদি রক্ষিত হইবে। যাহা ব্যবসার অফিসে সংরক্ষিত থাকিবে কোন পক্ষ ইচ্ছা করিলে ব্যবসার যাবতীয় নথি পরিদর্শনে সক্ষম থাকিবেন ।

১১ । পার্টনারগনের সভাঃ- প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার পার্টনারগনের সভা অনুষ্ঠিত হইবে ইহা ছাড়াও, জরুরী প্রয়োজনে যে কোন সময় পার্টনারগনের সভা আহবান করা যাইবে ব্যবসা সংক্রান্তে যে কোন সিদ্ধান্ত সভায় উপস্থিত পার্টনারগনের সম্মতিক্রমে অনুমোদিত হইবে।

১২ । বিনিয়োগ প্রত্যাহারঃ- অত্র চুক্তিপত্রের যে কোন পক্ষ ব্যবসা পরিচালনায় ইচ্ছুক না হইলে কিংবা পুঁজি প্রত্যাহার করিতে চাহিলে অপর পক্ষগনের নিকট ৩ (তিন) মাসের পূর্ব নোটিশ প্রদান করিবেন এবং উক্ত সময়কালের মধ্যে ব্যবসার দায়-দেনা ও হিসাব-নিকাশ চুড়ান্ত করা হইবে। চুড়ান্ত হিসাব-নিকাশ শেষে দায়-সম্পত্তির দায়িত্ব বিদায় পক্ষ গ্রহণ করিতে বাধ্য থাকিবেন । বিদায়ী পার্টনারের শেয়ার অবশিষ্ট পার্টনার ক্রয় না করিলে যে কোন কেউ এককভাবে ও যৌথভাবে তাহা ক্রয় করিতে পারিবেন । অত্র অংশীদারী ব্যবসা চালু থাকা অবস্থায় কোন পার্টনার অপর পার্টনারকে অবহিত না করিয়া তাহার শেয়ার ভিন্ন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বরাবরে বিক্রয়, বন্ধক, হস্তান্তর কিংবা দায়বদ্ধ করিতে পারিবে না।

                                                                           চলমানঃ- ৬


                                                                            পাতা- ০৬
১৩। মৃত পার্টনারে স্থলাভিষিক্তকরণঃ-  অত্র অংশীদারী মেয়াদকালে কোন পক্ষ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির আইনানুগ ওয়ারিশগণ কিংবা মনোনীত ব্যক্তিগণ মৃত পার্টনারের ব্যবসার শেয়ার প্রাপ্ত হইবে এবং অংশীদারী ব্যবসায় প্রতিনিধিত্ব করিবেন। মৃত পার্টনারের ওয়ারিশ/নমিনী স্থলাভিষিক্ত হইতে অনীহা প্রকাশ করিলে ব্যবসা হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত পূর্বক ব্যবসায় মৃত ব্যক্তির হিস্যা নির্ধারণপূর্বক তাহা ওয়ারিশ/নমিনীকে বুঝাইয়া দেওয়া হইবে।

১৪। বিরোধ মীমাংসাঃ-  পার্টনারগণের মধ্যে চুক্তিপত্র বা ব্যবসা সংক্রান্ত কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিলে উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পার্টনারগণের মনোনীত ৩ (তিন) জন শালিসকারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিরোধ মীমাংসা হইবে। যদি কোনভাবেই বিরোধ মীমাংসা না হয় তাহলে বিরোধ মীমাংসার জন্য পার্টনারগণ আদালতের শরণাপন্ন হইতে পারিবে ।

১৫। অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্রে সন্নিবেশিত হয় নাই এমন কোন প্রশ্নে পক্ষগণের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে ১৯৩২ ইংরেজি সালের অংশীদারী আইনসহ সংশিণ্টষ্ট আইনের বিধান প্রযোজ্য
হইবে।
                                                                                চলমানঃ- ০৭


                                                                              পাতা-০৭
১৬ । অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্রের পার্টনারগণ চুক্তিপত্রের যে কোন ধারা সংযোজন, সংশোধন, বিয়োজন কিংবা অত্র অংশীদারী ব্যবসার অবসায়ন কিংবা অত্র অংশীদারী ব্যবসাকে অন্য যেকোন ধরণের ব্যবসায় রূপান্তরের ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। এই ক্ষেত্রে অত্র চুক্তিপত্রের ১১ নং ধারা অনুসৃত হইবে।

                                                             চলমানঃ-  ০৮










                                                               পাতা-০৮
এতদ্বার্থে সুস্থ মস্তিষ্কে, কাহারো বিনা প্ররোচনায় অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্রের বক্তব্য ও শর্তাদি পড়িয়া, পড়াইয়া, শুনিয়া এবং ইহার মর্ম অবগত হইয়া স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে নিম্নলিখিত সাক্ষীগণের সম্মুখে অত্র অংশীদারী চুক্তিপত্র সম্পাদন করিয়া দিলাম ।

তারিখঃ- 

মুসাবিদাকারকঃ- 


সাক্ষীগণের স্বাক্ষরঃ- 						                               পক্ষগণের স্বাক্ষরঃ-
১।									
২। 									                                        ১ম পক্ষের স্বাক্ষর
৩। 									
৪।
৫।									                                         ২য় পক্ষের স্বাক্ষর

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা.docx ফরমেটে ফাইলটি ডাউনলোড করতে নিচের বাটনটিতে ক্লিক করেন।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা.pfd ফরমেটে ফাইলটি ডাউনলোড করতে নিচের বাটনটিতে ক্লিক করেন।

অংশীদারি ব্যবসা কী?

অংশীদারি ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসায়িক কাঠামো যেখানে দুই বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এখানে অংশীদাররা নিজেদের মূলধন, দক্ষতা এবং শ্রমের সমন্বয়ে ব্যবসার মুনাফা ও ক্ষতির দায়িত্ব উভয়ের মধ্যে ভাগ করে নেন।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র কী?

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র হলো অংশীদারি ব্যবসার একটি লিখিত দলিল যেখানে অংশীদারদের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং শর্তাবলী নির্ধারিত থাকে। এটি যে কোন ব্যবসা পরিচালনা সহজ এবং ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র লেখার প্রয়োজনীয়তা

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তিপত্র থাকা মানে হলো প্রতিটি অংশীদারের অধিকার, দায়িত্ব, এবং মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। এটি ব্যবসার আইনি সুরক্ষা প্রদান করে এবং যেকোনো বিরোধের ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র তৈরির ধাপ

১. প্রাথমিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা
অংশীদারদের মধ্যে সুষ্ঠু আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতা হওয়া জরুরি। এটি ব্যবসার ভিত্তি শক্ত করে।

২. চুক্তিপত্রের খসড়া তৈরি
প্রাথমিক আলোচনার পর চুক্তিপত্রের খসড়া প্রস্তুত করতে হবে। এখানে ব্যবসার নাম, শর্তাবলী, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. আইনগত বৈধতা নিশ্চিত করা
চুক্তিপত্রটি আইনানুগ করতে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এটি ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা এড়াতে সহায়ক হবে।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্রের মূল উপাদান

  1. অংশীদারদের নাম ও পরিচিতি
    চুক্তিপত্রে প্রত্যেক অংশীদারের পূর্ণ নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য থাকতে হবে।
  2. মূলধনের পরিমাণ ও অবদান
    ব্যবসায় কে কতটুকু মূলধন বিনিয়োগ করবেন, তা নির্ধারণ করে রাখতে হবে।
  3. মুনাফা ও ক্ষতির ভাগ
    মুনাফা এবং ক্ষতির কীভাবে ভাগাভাগি হবে, সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

অংশীদারি ব্যবসার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

অংশীদারি ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসায়িক কাঠামো যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এ ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে অংশীদারদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে চুক্তিপত্র অপরিহার্য। এটি ভবিষ্যতের ভুল বোঝাবুঝি বা বিরোধ এড়াতে সাহায্য করে।

চুক্তিপত্র লেখার প্রয়োজনীয়তা

অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তিপত্র থাকা মানে হলো প্রতিটি অংশীদারের অধিকার, দায়িত্ব, এবং মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। এটি ব্যবসার আইনি সুরক্ষা প্রদান করে এবং যেকোনো বিরোধের ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

চুক্তিপত্রের কাঠামো

ব্যবসার পরিচিতি

চুক্তিতে ব্যবসার নাম, ধরণ এবং কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। যেমন:

  • ব্যবসার নাম: “একতা ট্রেডার্স”
  • ধরণ: পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়
  • কার্যক্রম: পণ্য আমদানি-রপ্তানি

অংশীদারদের বিস্তারিত

প্রত্যেক অংশীদারের নাম, ঠিকানা এবং পরিচয়পত্রের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া তাদের দায়িত্ব ও অধিকারও উল্লেখ থাকতে হবে।

পুঁজি বিনিয়োগের বিষয়

বিনিয়োগের পরিমাণ

চুক্তিতে প্রতিটি অংশীদার কত টাকা বিনিয়োগ করবেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ:

  • অংশীদার ১: ৫,০০,০০০ টাকা
  • অংশীদার ২: ৭,০০,০০০ টাকা

সম্পদের শর্তাবলী

কোনো সম্পদ ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হলে সেটি কীভাবে ব্যবহৃত হবে এবং ব্যবসা বন্ধ হলে তার মালিকানা কী হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ করা উচিত।

আইন অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসার নিয়মাবলী

বাংলাদেশের অংশীদারি আইন অনুযায়ী, অংশীদারি ব্যবসার নিবন্ধন অত্যাবশ্যক। এটি ব্যবসার বৈধতা নিশ্চিত করে এবং আইনগত সুরক্ষা প্রদান করে।

অংশীদারি ব্যবসায় ঝুঁকি এবং চুক্তিপত্রের ভূমিকা

অংশীদারি ব্যবসায় ঝুঁকিগুলো মূলত অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ, আর্থিক জটিলতা এবং অনির্ধারিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে হতে পারে। একটি শক্তিশালী চুক্তিপত্র এই ঝুঁকিগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে।

অংশীদারি ব্যবসার চুক্তিপত্র তৈরির গুরুত্বপূর্ণ টিপস

১. পেশাদার পরামর্শ নেওয়া
একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নিন।

২. বিস্তারিত পরিকল্পনা রাখা
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সমস্যাগুলোকে সামনে রেখে চুক্তিপত্র তৈরি করুন।

পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি

ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কীভাবে ভোটিং হবে বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ করা জরুরি।

মিটিং আয়োজনের নিয়ম

মিটিং কতবার হবে এবং কী কী বিষয় আলোচনা হবে তা স্পষ্ট করা উচিত। উদাহরণ:

  • মাসিক মিটিং
  • বার্ষিক পর্যালোচনা

নতুন অংশীদার অন্তর্ভুক্তি এবং প্রস্থান

নতুন অংশীদার যোগদানের প্রক্রিয়া

নতুন অংশীদার যোগ করার ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ এবং শর্তাবলী কী হবে তা চুক্তিতে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন।

পুরনো অংশীদারের প্রস্থান

কোনো অংশীদার যদি ব্যবসা ছেড়ে যেতে চান, তবে তার পুঁজি ফেরত দেওয়া বা শেয়ারের বিক্রয়ের পদ্ধতি চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে।

বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি

আইনি ধারা

বিরোধের ক্ষেত্রে আইনি পদ্ধতিতে কীভাবে সমস্যা সমাধান করা হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকা উচিত।

মধ্যস্থতা পদ্ধতি

আইনি পদক্ষেপের আগে মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

চুক্তি সংশোধন ও বাতিল

সংশোধনের নিয়মাবলী

চুক্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবার সম্মতি থাকা জরুরি।

বাতিলের শর্তাবলী

ব্যবসার অবসান বা অংশীদারি ভাঙার ক্ষেত্রে কী শর্ত প্রযোজ্য হবে তা চুক্তিতে থাকতে হবে।

বিশেষ ধারা ও গোপনীয়তা

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা

অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবসা পরিচালিত হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকা উচিত।

তথ্য গোপনীয়তার শর্তাবলী

ব্যবসার তথ্য কীভাবে গোপন রাখা হবে এবং তা ফাঁস হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা চুক্তিতে নির্ধারণ করা উচিত।

উপসংহার ও পরামর্শ

অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি সুসংহত চুক্তিপত্র অপরিহার্য। এটি শুধু অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করে না, বরং ব্যবসার সাফল্যের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে। আইনগত দিক থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং পেশাদার পরামর্শ নেওয়া চুক্তিপত্র তৈরির মূল চাবিকাঠি।

FAQs

অংশীদারি ব্যবসার জন্য চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন?

চুক্তিপত্র অংশীদারদের মধ্যে স্পষ্টতা নিশ্চিত করে এবং বিরোধ এড়াতে সাহায্য করে।

চুক্তিপত্রে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে?

ব্যবসার নাম, অংশীদারদের বিস্তারিত, পুঁজি, লাভ-ক্ষতি বণ্টনের নিয়ম, দায়িত্ব ইত্যাদি।

কোনো আইনজীবী ছাড়া কি চুক্তিপত্র তৈরি করা সম্ভব?

সম্ভব, তবে আইনজীবীর সহায়তা নিলে চুক্তি বৈধতা এবং স্বচ্ছতা বাড়ে।

চুক্তিপত্র সংশোধন করা যায় কি?

হ্যাঁ, তবে সকল পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন।

অংশীদারি ব্যবসায় কি চুক্তিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক?

হ্যাঁ, এটি অংশীদারদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

চুক্তিপত্র কি শুধু আইনজীবী দিয়ে তৈরি করতে হবে?

না, তবে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নিলে চুক্তি আরও সঠিক হয়।

চুক্তিপত্র কি আপডেট করা যায়?

হ্যাঁ, অংশীদারদের সম্মতিতে চুক্তি সংশোধন করা যায়।

চুক্তিপত্রে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে উল্লেখ করতে হয়?

নির্দিষ্ট আরবিট্রেশন পদ্ধতি বা আদালতের রেফারেন্স উল্লেখ করতে হয়।

চুক্তিপত্রের নিবন্ধন কি বাধ্যতামূলক?

এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিবন্ধন করলে আইনি সুরক্ষা বাড়ে।

চুক্তিপত্র কি মৌখিকভাবে হতে পারে?

হ্যাঁ, তবে লিখিত চুক্তি অধিকতর সুরক্ষিত।

চুক্তিপত্র তৈরি করতে কত খরচ হয়?

এটি নির্ভর করে আইনজীবীর ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের ওপর।

চুক্তিপত্র কিভাবে বৈধ করা হয়?

চুক্তিপত্রে অংশীদারদের স্বাক্ষর এবং স্থানীয় নোটারি পাবলিকের সিলমোহর প্রয়োজন।

কীভাবে একটি ভালো অংশীদারি চুক্তি তৈরি করব?

আইনজীবীর সাহায্য নিন, সমস্ত শর্তাবলী পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করুন এবং আইনগত দিকগুলোকে অগ্রাধিকার দিন।

Sharing Is Caring:

আমি জিয়ারুল কবির লিটন, একজন বহুমুখী ব্লগার, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, জীবনধারা এবং ইসলামিক বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির প্রতি অনুরাগী। আমি কঠোর অন্বেষণ, অনুসন্ধান, তত্ত্বানুসন্ধান ও অনলাইনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে আমার আকর্ষক লেখার এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ব্লগের মাধ্যমে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং ইতিবাচকতা দিক গুলো নির্ভুল ভাবে সবার সাথে ভাগ করে চলার চেষ্ট করছি।

Leave a Comment