ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ এর মধ্যে রোজা অন্যতম একটি। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নরো নারীর উপর আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন মহান আল্লাহ তাআলা। রোজা রাখা যেহেতু ফরজ ইবাদত তাই আমাদেরকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। রোজা পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। তাই রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হয় যেন এমন কিছু না হয়, যেটার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়। আমরা সবাই জানি এমন সাধারণত তিনটি কারণে রোজা ভেঙে যায়। সেগুলো হলো- পান করা খাওয়া, ও স্ত্রী-সহবাস।
তবে এগুলো ছাড়াও আরও কিছু কারন রয়েছে যেগুলোর কারণে রোজা ভেঙে যায়। যেগুলো জেনে রাখা প্রত্যেক রোজাদারের জন্য জরুরি। সংক্ষেপে সেসব কারণ তুলে ধরা হলো—
রোজা ভঙ্গের ১৮ টি কারণ
১। ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে বা ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করলে।
( খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫ ফাতওয়া শামি,)
২।. বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা।
( খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নং- ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ)
৩।. আটার খামির, কাঁচা চাল বা প্রচুর লবণ একসঙ্গে খেয়ে ফেললে।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯ ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৪। এমন কিছু খাওয়া যা খাবার নয়। যেমন- কাগজ, পাথর, মাটি, কাঠ, লোহা, কয়লা ইত্যাদি।
( খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ,। খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৫।. পাথর, কাদামাটি, কঙ্কর, তুলা-সুতা, তৃণলতা, খড়কুটো ও কাগজ গিলে ফেলা।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩ ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৬।. নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২ ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৭। ভুলে হঠাৎ স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে আবার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছাকৃত সহবাস সম্পর্ক করা।
(খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫ ফাতওয়া শামি, )
৮।. কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া।
( খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭ ইমদাদুল ফাতাওয়া,)
৯। দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে। রক্ত যদি থুতুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং তা কণ্ঠনালিতে চলে যায়।
(খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭ ফাতাওয়া শামি, )
১০। মুখে পান সুপাড়ি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়া।
( খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২ ইমদাদুল ফাতাওয়া,)
১১। হস্তমৈথুন করা।
( খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭ ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ,)
১২। রোজা স্মরণ এমন অবস্থায় কুলি করার সময় কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে (গলায়) পানি চলে যাওয়া।
(খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯ আহসানুল ফাতাওয়া, )
১৩। কাউকে জোর-জবদস্তি করে পানাহার করানো।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, )
১৪। রাত মনে করে (সেহরি সময় আছে মনে করে) সুবহে সাদিকের (সূর্য উঠা) পর সাহরি খাওয়া।
(জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
১৫। ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা অথবা বমি আসার পর গলা দিয়ে গিলে ফেলা।
( খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭ ফাতহুল কাদির,)
১৬। সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ভুলে দিনের বেলা অথাৎ ইফতারির আগেই ইফতার করা।
(বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
১৭। . যদি কেউ অনেক রাত আছে ভেবে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায়, এবং রাত শেষ হয়েছে জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সহবাস থেকে বিরত হয়।
(খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৪ ফাতওয়া শামি, )
১৮। বরফের টুকরো অথবা বৃষ্টির পানির ফোটা খাদ্যানালির ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩ ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, )
আরও পড়ুনঃ
অসুস্থতা মানষের জন্য রোজা
যেহেতু অসুস্থতা মানুষের শরীর ও মনের ভারসাম্য ঠিক ভাকে না। এবং কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই অসুস্থ ব্যক্তির রোজা না রাখার জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে। বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে থাকে সে যেন অন্য সময়ে এই সংখ্যাটি পূরণ করে”। (আয়াত 184: সূরা বাকারা,)
শর্ত হল যে অসুস্থতা এমন মাত্রায় যে ব্যক্তির অনেক ক্ষতি হওয়ার, ভোগান্তির পরিমাণ বৃদ্ধি বা সুস্থ হতে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একইভাবে ধার্মিক, খোদাভীরু ও অভিজ্ঞ ডাক্তার রোজা না রাখার পরামর্শ দিলে রোজা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পরে তা কাজা করতে হবে।
বৃদ্ধ মানষের জন্য রোজা
বার্ধক্য: ইসলামী শরীয়ত খুব বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাদের শারীরিকভাবে অক্ষম হলে রোজা না রাখার অনুমতি দেয়। যদি এমন হয় যে, বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা বছরের যেকোনো সময় রোজা রাখতে অক্ষম হন (দিন ছোট হোক বা দীর্ঘ হোক, শীত হোক বা গ্রীষ্ম) তাহলে তাদের কাফফারা হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “রোযার কারণে বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা যাদের অনেক কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য হল তাদের পরিবর্তে একজন গরিব দুখী অভাবীকে খাবার দেওয়া।” (সূরা বাকারা, আয়াত 184)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা যারা রোজা রাখার সামর্থ্য রাখে না, তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন বা অভাবগ্রস্তকে খাওয়াতে হবে।’ (তাফসীরে ইবনে কাসির)
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য রোজা
গর্ভধারণ : গর্ভবতী মা ও স্তন্যদানকারী মা যদি নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন। এবং স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী নারীদের জন্য রোজার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন।’ ( ২৩১৫ হাদিস সুনানে নাসায়ি, )
রোজার ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে ঠিকি কিন্তু তাদের পরবর্তী সময়ে সুবিধামত রোজা কাজা করতে হবে। আর যদি স্তন্যদানকারী ও গর্ভবতী নারীদের নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তার জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।
সফররত ব্যক্তির মানষের জন্য রোজা
সফর : সফররত ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা না রাখার অনুমতি আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
শর্ত এই যে, যতটুকু সফর ততটুকু নামায সংক্ষিপ্ত করা জায়েয। তবে নামায ভঙ্গের মত রোযা ত্যাগ করা জরুরী নয়; বরং ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারে এবং ভঙ্গ করতে পারে। রোজা ভেঙ্গে গেলে পরে কাযা করতে হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রমজানে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৪৭)
আরও পড়ুনঃ
- আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- ইসলাম ধর্মে কোরবানি ও কোরবানি সম্পর্কে নবীজির ১০টি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস
বিশেষ প্রয়োজন রোজা না রাখার অনুমতি
অনিবার্য কারণে : বিশেষ প্রয়োজন পূরণ ও আপতিত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। যেমন ডুবে যাওয়া বা আগুনে পোড়া ব্যক্তির চিকিৎসা রোজা ভঙ্গ না করলে করা সম্ভব হয় না। তবে এমন ব্যক্তিও পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রোজা রেখে মক্কার উদ্দেশে সফর করেছিলাম। আমরা একজন এক জায়গায় যাত্রা বিরতি দিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের শত্রুর নিকটবর্তী হয়েছ। রোজা ভঙ্গ করাই তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২০)
১। ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে বা ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করলে।
( খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫ ফাতওয়া শামি,)
২।. বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা।
( খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নং- ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ)
৩।. আটার খামির, কাঁচা চাল বা প্রচুর লবণ একসঙ্গে খেয়ে ফেললে।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯ ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৪। এমন কিছু খাওয়া যা খাবার নয়। যেমন- কাগজ, পাথর, মাটি, কাঠ, লোহা, কয়লা ইত্যাদি।
( খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ,। খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
বিস্তারিত পড়ুনঃ- রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
২।. বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকা সেবন করা।
( খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নং- ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ)
৩।. আটার খামির, কাঁচা চাল বা প্রচুর লবণ একসঙ্গে খেয়ে ফেললে।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯ ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৪। এমন কিছু খাওয়া যা খাবার নয়। যেমন- কাগজ, পাথর, মাটি, কাঠ, লোহা, কয়লা ইত্যাদি।
( খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮ জাওয়াহিরুল ফিকাহ,। খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
বিস্তারিত পড়ুনঃ- রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
৬।. নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে।
(খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২ ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, )
৭। ভুলে হঠাৎ স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে আবার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছাকৃত সহবাস সম্পর্ক করা।
(খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫ ফাতওয়া শামি, )
৮।. কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ দেওয়া।
( খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭ ইমদাদুল ফাতাওয়া,)
বিস্তারিত পড়ুনঃ- রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
1 thought on “রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি”