রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়

কিছু প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো উত্তর জানা অনেক জরুরী হলেও লজ্জার কারো জিজ্ঞাসা করতে পারিনা। আজ এমনি কিছু প্রশ্নে উত্তর নিয়ে হাজির হলাম ইসলামিক থেকে আপনাদের মাঝে প্রশ্ন গুলো হলোঃ ১। রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি?, ২। রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসলের নিয়ম, ৩। রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়,

এই প্রশ্ন গুলো অনেকের মনেই উকি ঝুকি দিলেও লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। যাই আমরা এই প্রশ্নে উত্তর নিয়ে আজকে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। যাই হোক আজকে আমরা যেই প্রশ্ন উত্তর নিয়ে হাজি হলাম ।

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়
রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে?

উত্তর না, রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। কিন্তু এ অবস্থায় রোজা ভেঙ্গে গেছে ভেবে অনেকেই দিনের বেলায় পানাহার করেন। রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ যা করতে হবে তা নিচে দেওয়া হল:

কেউ কেউ মনে করেন রোজা অবস্থায় স্বপ্ন দেখলে রোজা ভেঙ্গে যায়। তাদের ধারণা সঠিক নয়। খারাপ স্বপ্নের কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না।

এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস দেখে নেই।

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস রোজাকে ভাঙে না- শিঙা, বমি, স্বপ্নদোষ। (তিরমিজি শরিফ, মিশকাত শরিফ)। অবশ্য এমন আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সংঘটিত হলে রোজা ভাঙে না। এখানে ব্যক্তি ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলেমদের ঐকমত্য হচ্ছে, কারো স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। কারণ সে এক্ষেত্রে অপারগ। যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি মাছি উড়ে এসে অসাবধানতাবশত কারো পেটে ঢুকে গেলে, সেক্ষেত্রেও সে অপারগ। (আল-মাজমু)

শায়খ বিন বাজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে ব্যক্তি দিনের বেলা ঘুমিয়েছে এবং তার স্বপ্নদোষ হয়েছে, বীর্যও বের হয়েছে; সে কি ওই দিনের রোজার কাজা পালন করবে? জবাবে তিনি বলেন, তার ওপর কাজা আবশ্যক নয়। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন নয়। কিন্তু তার ওপর গোসল ফরজ; যদি বীর্য দেখে থাকে। (মাজমুউল ফাতাওয়া ১৫/২৭৬)

শায়খ উসাইমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকেও এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তার রোজা শুদ্ধ হবে। স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভাঙবে না। কেননা স্বপ্নদোষ তার ইচ্ছাধীন নয়। ঘুমন্ত অবস্থায় কলম তুলে রাখা হয়। এক্ষেত্রে ঘুমন্ত মানুষের কোনো হাত থাকে না।

আমরা এই লেখার শেষের দিকে এ জাতীয় আরও ১০টি কারণ উল্লেখ করেছি যেগুলো সংঘটিত হলে রোজা ভাঙে না তাই সম্পুর্ন পোস্টটি পড়ুন।

তাই রোজা রেখে স্বপ্নে খারাব কিছু দেখলে বা স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ভেবে পানাহার করা কোন ভাবেই ঠিক হবে না। বরং রোজা রেখে তা পূরণ করুন।

আরও পড়ুনঃ

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি?

অনেকেই আছেন যাদের প্রায়ই স্বপ্নদোষ হতেই থাকে। এরকম হলে আমাদের কি করতে হবে তা আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম বা রমজানে স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি তা হয়তো আমরা জানি না। তাই এখন আমরা জানবো রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম বা রমজানে স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি?

ঘুমের সময় রাগমোচন, নিদ্রারতি, যৌনস্বপ্ন বা নৈশপাতনকে সাধারণ ভাষায় স্বপ্নদোষ বলে। এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করা এটি করে। এটা নিয়ে কথা বলতে বা লিখতে লজ্জা নেই। বিষয়টি নিয়ে ইসলামী শরীয়তের সমাধান জানতে আলোচনা করা যেতে পারে। যদি কেউ রোজা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার এই সময়ে স্বপ্ন দেখে বা স্বপ্নদোষ হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা এটা রোজাদারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটে। এ নিয়ে ভাবনার কিছুই নেই ফজর গোসল সেরে অন্য দিনের মত নামাজ, রোজা পালন করতে হবে।

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ফরজ গোসলের নিয়ম

অন্যান্য সময় গোসল ফরজ হলে বা স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম সবাই জানলেও রোজা অবস্থায় গোসল ফরজ হলে বা স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম জানি না তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নিই রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে গোসলের নিয়ম কি ও রমজান মাসে রোজা থাকা আবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি?

রোজাদারের ফরজ গোসলের ফরজ সমূহ হলো-

গোসলের ফরজ হল মোট তিন টি। এই তিন টির মধ্যে যেকোনো এক টি বাদ পড়লে ফরজ গোসল আদায় করা হবে না। তাই ফরজ গোসলের সময় এই তিন টি কাজ খুব সাবধানে- সর্তকতার সাথে আদায় করে হয় কিন্ত রোজা থাকা আবস্থায় এর কিছু পরিবর্তন রয়েছে ।

যে ব্যক্তির রোজা, হজ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়েছে তার কোনো গুনাহ নেই; তার উপর কাফফারা নেই। এটি তার রোজার ওপর, হজের ওপর বা উমরার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। সে বীর্যপাত করে থাকলে তার গোসল করা ফরজ। এ অবস্থায় গোসলের তিন ফরজ আদায় করে গোসল করা ছাড়া সে পবিত্র হবে না। গোসলের তিন ফরজ হলো:

গোসলের ফরজ ৩টির মধ্যে একটি হল
১. গড়গড়ার সাথে কুলি করতে হবে,
কিন্তু রোজা রাখা অবস্থায় গড়গড়া করা যাবে না এতে গলায় পানি ঢুকে যেতে পারে বা যাবে তাই সাধারণ সাধারন কুলি করতে হবে।

২. নাকে পানি দিয়ে নাকের নরম অংশ আঙ্গুল দারা ভিজানো,
কিন্তু রোজা অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবে নাকে পানি দিতে হবে যাতে নাকের নরম অংশে পানি না যায়, এতে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে।

৩. এরপর পুরো শরীরে পানি ঢালা ও ভালোভাবে গোসল করা (নাভীর ভেতর আঙ্গুল দিয়ে ভেজানো, আর নারীরা লজ্জাস্থান সুন্দরভাবে ধৌত করা)। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে শরীরের একটি পশমও যেন শুকনো না থাকে থাকলে শরীর পবিত্র হবে না।

রোজা নষ্ট না-হওয়ার আরও ১০টি কারণ:

১. অনিচ্ছাকৃত ভাবে ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি বা এ জাতিয় কোন কিছু গোলার ভিরতে প্রবেশ করা।

২. অনিচ্ছাকৃত কানে পানি প্রবেশ করা।

৩. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া অথবা কোন কারনে ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়) ।

৪. বমি আসার পর অনিচ্ছাকৃত বা নিজে নিজেই গোলা দিয়ে ফিরে যাওয়া।

৫. চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা।

৬. ইনজেকশন নেওয়া।

৭. ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলা।

৮. শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা।

৯. ঠান্ডার জন্য গোসল করা।

১০. সুগন্ধি ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর যেম ফুল এর ঘ্রাণ নেওয়া।

FAQs

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়

ঘুমের সময় রাগমোচন, নিদ্রারতি, যৌনস্বপ্ন বা নৈশপাতনকে সাধারণ ভাষায় স্বপ্নদোষ বলে। এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করা এটি করে। এটা নিয়ে কথা বলতে বা লিখতে লজ্জা নেই। বিষয়টি নিয়ে ইসলামী শরীয়তের সমাধান জানতে আলোচনা করা যেতে পারে। যদি কেউ রোজা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার এই সময়ে স্বপ্ন দেখে বা স্বপ্নদোষ হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা এটা রোজাদারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঘটে।

রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে

উত্তর না, রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। কিন্তু এ অবস্থায় রোজা ভেঙ্গে গেছে ভেবে দিনের বেলায় পানাহার করা যাবে না।

Sharing Is Caring:

আসসালামুয়ালাইকুম! আশা করি আপনারা সবাই সুস্থ আছেন, আর যদি অসুস্থ থাকেন তবে দু’আ করি আল্লাহ আপনাকে শীঘ্রই সুস্থ করুন…আমরা অনেকেই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু এই জানার জন্য প্রয়োজন ভালো মানের বিশুদ্ধ ইসলামিক উৎস। যা অনলাইলে খুজে পাওয়া একটু কঠিন সে দিক চিন্তা করেই আমি প্রথন ইসলামিক বিষয় নিয়ে লেখা লেখি শুরু করি। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে নিজের ভাষায় লিখে আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ধন্যবাদ!

3 thoughts on “রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়”

  1. স্বপ্নদোষ সম্পর্কে লেখাটি সত্যিই অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে।

    Reply

Leave a Comment