মানুষের জীবনে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন মানুষ কষ্ট পায়, দুঃখ-বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়। কেউ কেউ বিপদে ধৈর্য হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কেউ কেউ তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। কি করবে আর কি করলে সমস্যা সমাধান হবে তা বুঝে উঠতে পারে না। এমন আবস্থায় একমাত্র পানাহ্ বা সাহায্য চাওয়ার বা আশ্রয়স্থল আল্লাহ্ তাআলা।
যারা আল্লাহর কাছে তাদের জীবনের সবকিছু চায়। আল্লাহ যা দেন তাতে সন্তুষ্ট হন; তারা বাকিদের থেকে কিছুটা আলাদা। আর এই অনুগ্রহ প্রার্থনার মর্যাদাও অনেক বেশি। যেখানে নিজের কোনো চাহিদা নেই। সে মনে করে আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহই তার নিজের জন্য যথেষ্ট। সর্বশক্তিমান আল্লাহও সেই বান্দাকে অনেক মর্যাদাপূর্ণ রহমত বা অনুগ্রহ দান করেছিলেন। অসহায় ও অক্ষমদের রহমত পেতে নিচের দোআ টি আমল করতে পারেন।
![আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার দোয়া](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2024/01/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE.jpg?resize=800%2C483&ssl=1)
বিপদ থেকে বাঁচার দোয়া
বিপদ থেকে বাঁচতে সাহায্য ও শক্তি প্রয়োজন। আর তা যদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাহলে মানুষের কাছে কোনো বিপদ আসতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য কোরআনুল কারিমে এ ধরনের দোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন; যার মধ্যে শক্তি সাহায্যের জন্য চমৎকার আবেদন রয়েছে। মুমিনের জন্য, এই প্রার্থনা সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষার উপায় হতে পারে। নিচে আমরা সেই দোআটি তুলে ধরলাম।
কোরআনুল কারিমে পাওয়া দোয়াটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সাহায্য প্রার্থনার এক টুকরো পরশ পাথর। তাই বান্দা প্রতিটি পদে পদে আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করবেন-
![বিপদ থেকে বাঁচার দোয়া](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2024/01/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE.jpg?resize=576%2C77&ssl=1)
উচ্চারণ : রাব্বি আদখিলনি মুদখালা সিদকিও ওয়া আখরিঝনি মুখরাঝা সিদকিও ওয়াঝআললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাসিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমাকে যেখানে প্রবেশ করাবেন, কল্যাণের সঙ্গে প্রবেশ করাবেন। আর যেখান থেকে বের করবেন (তাও) কল্যাণের সঙ্গে বের করবেন। আর আমাকে আপনার কাছে এমন বিশেষ ক্ষমতা দান করবেন, যার সঙ্গে (আপনার) সাহায্য থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৮০)
কোরআনুল কারিমের এ আয়াতটি একটি প্রাণবন্ত ও আবেগময় দোয়া। মানুষের প্রার্থনা যদি এমন প্রাণবন্ত ও আবেগময় হয়, তবে সে আবেগ ও প্রাণবন্ত আবেদন আল্লাহর দরবারে কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। আর তাতে মানুষ দুনিয়া ও পরকালে পাবে সফলতা। বিপদ-আপদে পাবে ক্ষমতা ও সাহায্য।
বিপদে আল্লাহর আশ্রয় লাভের দোয়া
বিপদে আল্লাহর আশ্রয় লাভের আরেকটি দোয়া
![বিপদে আল্লাহর আশ্রয় লাভের দোয়া](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2024/01/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE.jpg?resize=774%2C164&ssl=1)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রহমাতাকা আরজু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইনিন, ওয়া আসলিহ-লি শানি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র উপাস্য।
এই দোয়াটিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রার্থনা হিসেবে বর্ণনা করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)
আরও পড়ুনঃ
আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে হযরত মূসা (আঃ) দোয়া
হযরত মূসা (আঃ) মিসর থেকে মাদিয়ানে আসার পর তিনি ছিলেন অত্যন্ত অসহায়। সেখানে তার কোনো আশ্রয় ছিল না। এমন অসহায় অবস্থায় তিনি আল্লাহর রহমত কামনা করে এই দোয়া করলেন-
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফাক্বির।’
অর্থ: ‘হে আমার আল্লাহ্! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাজিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২৪)
উল্লেখ থাকে যে, যখন মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের পরিষদের সদস্যদের আক্রমণ বা হত্যার আশঙ্কা করেছিলেন, তখন তিনি মিশর ছেড়ে মাদিয়ানে চলে যান। সেখানে তার কোনো আশ্রয় ছিল না। দীর্ঘ যাত্রায় তিনি ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত ছিলেন। এ সময় দুই কন্যার পশুকে পানি খাওয়ানোর পর গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে আল্লাহর কাছে মঙ্গল বা অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। ফলে মহান আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালামকে উত্তম আশ্রয় দান করেন।
মুসা আলাইহিস সালামের এই দোয়াটি অনুগত বান্দাদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য একটি কার্যকর প্রার্থনা। যারা একনিষ্ঠ বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর কাছে সবকিছু ছেড়ে দেন এবং এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মঙ্গল কামনা করেন, আল্লাহতায়ালা নিঃসন্দেহে তাদের অসীম কল্যাণ ও অনুগ্রহ দান করবেন।
মুসা আলাইহিস সালামের আরেকটি দোয়া
![আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে হযরত মূসা (আঃ) দোয়া](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2024/01/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B8%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%83-%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE.jpg?resize=669%2C134&ssl=1)
উচ্চারণ: রাব্বিশরাহলি সাদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহ্লুল উক্বদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু কাওলি, ওয়াঝআললি ওয়াযিরাম মিন আহলি হারুনা আখিশদুদ বিহি আযরি, ওয়াশরিকহু ফি আমরি কায় নুসাব্বিহাকা কাছিরা ওয়া নাজকুরাকা কাছিরা ইন্নকা কুংতা বিনা বাসিরা।’
অর্থ : ‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন আর আমার জন্য আমার কাজকে (দায়িত্ব) সহজ করে দিন; আর আমার জিহ্বার (কথা বলার) জড়তা দূর করে দিন যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে; আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন, আমার ভাই হারূনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন; এবং তাকে আমার কাজে শরিক করুন ‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি, নিশ্চয়ই আপনিই তো আমাদের সব কিছু দেখেন।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ২৫-৩৫)
আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আলাইহিস সালামের এই দোয়া কবুল করেন। তিনি ফেরাউনের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন।
আরও পড়ুনঃ
- রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়
- আসরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ
- এশার নামাজ কয় রাকাত নিয়ত সূরা
- রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
বস্তুত সৎ ও পুণ্যের পথে চলা যদি কারো পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হয়, তবে এর একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও নামাজ। আর এ দুটি কাজ থেকে মুমিন-মুসলমানরা যে শক্তি লাভ করবে; সেটা তার পথচলাকে সহজতর করে দেবে। এছাড়াও মহানবী (সা.) কঠিন বিপদাপদের মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য লাভের কথা বলেছেন। এমনকি আল্লাহর সাহায্য লাভের দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন।
উপসংহার
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রতিটি বিষয়ে তাদের অন্তরকে আল্লাহর দিকে ফেরানোর তাওফীক দান করুন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সবাইকে শক্তি এবং সব পরিস্থিতিতে সাহায্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন আমীন।