মাগরিবের নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে চতুর্থ ওয়াক্ত। মাগরিবের নামাজ আসরের নামাজের পর ও এশার নামাজের আগে আদায় করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত অন্যান্য নামাজের চেয়ে মাগরিবের নামাজ বেশি ফজিলত পূর্ণ।
আল কোরআন ও হাদিসে সকালে এবং সন্ধ্যার আদায় করা নামাজকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত সন্ধ্যার হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি।

মাগরিবের নামাজের সময়
সূর্যাস্ত গেলে মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় ও আকাশ লাল বর্ন থাকা পর্যন্ত নামাজের সময় থাকে। এই সময় খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তাই মাগরিবের নামাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে নিতে হয়। তাই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই মাগরিবের নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত।
সালামা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, ‘সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই (সূর্যাস্ত যাওয়ার পর) আমরা নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইমামতিতে মাগরিবের নামাজ আদায় করতাম।’ (সহীহ বুখারি: ৫৬১)
মাগরিবের নামাজের সময় বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহ তায়ালা ততবারই তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারির উপকরণ প্রস্তুত করেন।’ (সহীহ বুখারি : ৬২২)
এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায় মাগরিবের নামাজ আদায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মাগরিবের নামাজের তাৎপর্য এ হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত হয়।
আরও পড়ুনঃ
মাগরিবের নামাজ কয় রাকাত
মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। প্রথম তিন রাকাত ফরজ , এরপর দুই রাকাত সুন্নত। এর পরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া যায় তবে নফল ঐচ্ছিক। এভাবেই মাগরিবের নামাজ ধারাবাহিক ভাবে আদায় করতে হয়। মুসাফির আবস্থায় থাকলে তারা শুধু মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করলেই চলবে।
মাগরিবের সুন্নত নামাজ
তিন রাকাত ফরজ নামাজের পর যে সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয় তাকে বলা হয় সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুন্নতে মুয়াক্কাদার অর্থ হলো – দৃঢ় নির্দেশিত সুন্নত। অর্থাৎ যে নামাজ আদায়ের জন্য দৃঢ়ভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এটি আদায় না করলে গুনাহ হবে না তবে আদায় করলে অনেক সওয়াব আমল নামায় লেখা হয়। তাই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বিনা কারণে ত্যাগ না করা উচিৎ নয়।
মাগরিবের নামাজের পর নফল নামাজ
আর বাকি রইল দুই রাকাত নফল। নফল অর্থ হচ্ছে – অতিরিক্ত। অর্থাৎ ফরজ ও সুন্নত নামাজের পাশাপাশি অতিরিক্ত যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে নফল নামাজ বলে যা ঐচ্ছিক। নফল আদায় করলে আমল নামায় সওয়াব লেখা হবে। আদায় না করলে পাপ হবে না।
মাগরিবের নামাজের শেষ সময়
সূর্যাস্ত গেলে মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় ও আকাশ লাল বর্ন থাকা পর্যন্ত মাগরিবের নামাজ আদায় করার সময় থাকে। এই সময় খুব দ্রুত চলে যায়। তাই মাগরিবের নামাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করে নিতে হয়। তাই সূর্য ডোবার সাথে সাথেই মাগরিবের নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত।
মাগরিবের নামাজের নিয়ত
প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সময় নামাজের নিয়ত পড়ে নিতে হয়।
মাগরিবের নামাজের নিয়ত সবার উদ্দেশ্যে শোয় করা হল।
ফরজ নামাজের নিয়ত:
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা
সালাসা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লাহি
তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল
কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
বাংলা অর্থ: “মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ
নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী
হয়ে আল্লাহর নামে নিয়ত করলাম,
আল্লাহু আকবার।”
সুন্নত নামাজের নিয়ত:
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকয়াতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু
রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান
ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি
আল্লাহু আকবার।”
বাংলা অর্থ: “মাগরিবের দুই রাকাত
সুন্নত নামাজ আদায় করার
উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম,
আল্লাহু আকবার।”
নফল নামাজের নিয়ত:
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা
রাকয়াতি সালাতিল নফলে মুতাওয়াজ
জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি
আল্লাহু আকবার।”
বাংলা অর্থ:
“মাগরিবের দুই রাকাত নফল
নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে
নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”
উপরোক্ত নিয়তগুলো মাগরিবের ফরজ, সুন্নত ও নফল নামাজের শুরুতে পড়তে হয়।
মাগরিবের নামাজ কাযা পড়ার নিয়ম
প্রশ্ন– মাগরিবের নামাজ সময় মত আদায় করতে পারিনি। মাগরিবের নামাজ এশার নামাজের আগে পড়তে ভুলে গেলে কী করব? এশার নামাজ শেষে পড়ব নাকি অন্য সময়?
যদি আপনি মাগরিবের নামাজ আদায় করতে ভুলে যান, তাহলে এশার সালাতের পর পরই মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেবেন। তাহলে আল্লাহ আপনার নামাজ কবুল করবেন, ইনশা আল্লাহ।
মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
ফরজ নামাজ আদায়ের নিয়ম
ওযু করে পাকপবিত্র হয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে হবে ।
নিয়ত পাঠ করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতে হবে এবং হাত বুকের সাথে বাঁধতে হবে।
এরপর সানা পড়তে হবে।
সানা
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা
ওয়াতা ওয়া রাকাসমুকা ওয়া তায়ালা
জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক”
তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” রুকুতে যেতে হবে।
রুকুতে গিয়ে “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিনবার পাঠ করতে হবে।
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলে রুকু থেকে উঠে উত্তরে “রব্বানা লাকাল হামদ” এক বার পাঠ করতে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যেতে হবে।
সিজদায় গিয়ে ”সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” তিনবার পাঠ করতে হবে।
“আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে উঠে পুনরায় “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যেতে হবে এবং ”সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” একই ভাবে তিনবার পাঠ করতে হবে।
এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হলো।
একই ভাবে দ্বিতীয় রাকাতও আদায় করতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাত শেষে বসে তাশাহহুদ পড়তে হবে।
তাশাহুদ
“আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু
ওয়াত তায়্যিবাতি আসসালামুয়ালাইকা
আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
আসসালামুয়ালাইনা আ’লা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন,
আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান
আবদুহু ওয়া রসূলুহ্”
অতঃপর আবার দাঁড়াতে হবে এবং একই নিয়ম অনুযায়ী এক রাকাত আদায় করতে হবে, তবে এই এক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না।
তিন রাকাতের এই শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করে দুরূদ শরীফ, দোয়া মাসুরা, পাঠ করতে হবে।
দরূদ শরীফ
“আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদ
ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা
আলা ইব্রাহীম ওয়ালা আলি ইব্রাহীম
ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ
ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা বারতকা
আলা ইব্রাহীম ওয়ালা আলি ইব্রাহীম
ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।”
এরপর দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।
দোয়া মাসুরা
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি
জুলমান কাসিরা ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্
জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম
মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা
আন্তাল গাফুরুর রাহীম।”
এরপর উভয় পার্শে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
এভাবে মাগরিবের ফরজ নামাজ তিন রাকাত পড়তে হয়।
আরও পড়ুনঃ
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- রোজা রাখা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়
- রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি
FAQs
মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। প্রথম তিন রাকাত ফরজ , এরপর দুই রাকাত সুন্নত। এর পরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া যায় তবে নফল ঐচ্ছিক।
যদি আপনি মাগরিবের নামাজ আদায় করতে ভুলে যান, তাহলে এশার সালাতের পর পরই মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেবেন। তাহলে আল্লাহ আপনার নামাজ কবুল করবেন, ইনশা আল্লাহ।
মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। তিন রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া যায় তবে নফল ঐচ্ছিক।
ওযু করে পাকপবিত্র হয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে হবে ।
নিয়ত পাঠ করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতে হবে এবং হাত বুকের সাথে বাঁধতে হবে।
এরপর সানা পড়তে হবে।
তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” রুকুতে যেতে হবে।
রুকুতে গিয়ে “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিনবার পাঠ করতে হবে।
“সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলে রুকু থেকে উঠে উত্তরে “রব্বানা লাকাল হামদ” এক বার পাঠ করতে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যেতে হবে।
সিজদায় গিয়ে ”সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” তিনবার পাঠ করতে হবে।
“আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাহ থেকে উঠে পুনরায় “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদায় যেতে হবে এবং ”সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” একই ভাবে তিনবার পাঠ করতে হবে।
এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হলো।
একই ভাবে দ্বিতীয় রাকাতও আদায় করতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাত শেষে বসে তাশাহহুদ পড়তে হবে।
অতঃপর আবার দাঁড়াতে হবে এবং একই নিয়ম অনুযায়ী এক রাকাত আদায় করতে হবে, তবে এই এক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না।
তিন রাকাতের এই শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করে দুরূদ শরীফ, দোয়া মাসুরা, পাঠ করতে হবে।
এরপর উভয় পার্শে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করুন।
1 thought on “মাগরিবের নামাজের শেষ সময়”