কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও বিধান

কাযা নামাজ: ভুলবশত বা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কেউ কোনো সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে পরে এই নামাজ আদায় করাকে কাযা নামাজ বলে। ফরজ বা ওয়াজিব নামায ছুটে গেলে তা আদায় করতে হবে।

সুন্নত বা নফল নামায না পড়লে কাযা করতে হবে না।

যদি কেউ যথাসময়ে নামায আদায় করতে না পারেন যেমন ঘুমিয়ে অথবা ভুলে গেলে এবং নামাজের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে, পরে যখনই তার চেতন হবে অথবা ফরজ নামায আদায় না করার কথা মনে পড়বে তখনই ভুলে যাওয়া (ফরয) নামাযের কাযা পড়া জরুরী।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

কাযা নামাজের বিধান

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ বলেন, “যে ব্যক্তি কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে তার কাফফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা কাযা আদায় করা।” 

অন্য এক বর্ণনায় বলেন, “এ ছাড়া তার আর কোন কাফফারা অথবা প্রায়শ্চিত্ত নেই।” ( মুসলিম, মিশকাত ৬০৩ নং বুখারী,)

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ আরো বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় বা ঘুমের মধ্যে কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো হয় জাগ্রত অবস্থায়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন ফরজ নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তার উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া। কেন না, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।” (মুসলিম,  মিশকাত ৬০৪নং, কুরআন মাজীদ ২০/১৪,)

অতএব কাযা নামায পড়ার সময় নেই। দিন বা রাতের যে কোন সময়, যখনই আপনি সচেতন হন বা স্মরণ করেন তখনই ঘুম থেকে উঠে প্রথম নামাজ পড়া জরুরী। অন্যথায় পরবর্তী তারিখ বৈধ নয়।

আরও পড়ুনঃ

অসুস্থ ব্যক্তির কাযা আদায়

যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কাযা নামায না পড়েই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং অসুস্থ ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে কাযা নামাযের ফিদিয়া (মূল্য) ওয়ারিশদেরকে দিতে বলে, তার উত্তরাধিকারীদের উপর ফিদিয়া দেওয়া ওয়াজিব।

যদি কোনো ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা ও জীবদ্দশায় সালাত ছুটে যায়, যদি মৃত ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে তার সালাত আদায়ের কাফফারা জন্য অসিয়ত করে এবং তার নিজের সম্পদ থাকে, তাহলে তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ পরিশোধ করতে হবে।

আর যদি তার কোন সম্পদ না থাকে অথবা সে সম্পদ রেখে যায় কিন্তু কোন কাফফারা অসিয়ত না করে থাকে। তাহলে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আত্মীয়দের কাফফারা দিতে হবে না। তবে আত্মীয়দের কাফফারা দেওয়া অতি উত্তম। এই কাফফারা র দ্বারা মৃত ব্যক্তি শান্তি লাভ করে।

কাফফারার পরিমাণ হলো, বিতরসহ দৈনিক ছয় ওয়াক্ত নামাজ গণনা করে পৌনে দুই সের গম বা আটা বা এর বাজারমূল্য প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য গরীব মিসকিনকে দিতে হবে। অথবা প্রতিটি খাবারের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দুবেলা তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে হবে।

অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের আহকাম

১. যদি অসুস্থ ব্যক্তি বসে নামাজ আদায় করতে এবং সিজদা করতে সক্ষম হয় তাহলে সিজদা দেয়া সেই অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।

২. যদি বসে নামাজ আদায় করতে এবং সিজদা দিতে অক্ষম হয় তাহলে শরীর দিয়ে রুকু ও সিজদার জন্য ইশারা করবে। সিজদা করার সময় রুকুর চেয়ে একটু নিচু হবে। শরীর দিয়ে ইশারা করতে না পারলে মাথা দিয়ে ইশারা করবেন। অনুরূপভাবে যখন চিৎ হয়ে শুয়ে নামাজ পড়বে তখনও মাথা দিয়ে ইশারা করবেন।

৩. যদি  অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি নামাজের জন্য অজু করতে সমস্যা হয় অথবা প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়া খুব বেশি কষ্টকর হয়, তাহলে যোহর ও আসর, মাগরিব ও ইশা একসাথে আদায় করতে পারবেন। অসুস্থ ব্যক্তি তার সুবিধা মতো প্রথম অথবা শেষটার সময় একত্র করে আদায় করতে পারবেন।

৪. যতক্ষণ পর্যন্ত হুঁশ-জ্ঞান, ঠিক থাকে বা চেতনাবস্থায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজ আদায় করা বাধ্যতা মূলক যা মাফ হবে না। অতএব অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতার অজুহাতে এ ব্যাপারে অবহেলা করা কোন ভাবেই উচিত হবে না। বরং নামাজ পড়ার ব্যাপারে যতটা সম্ভব চেষ্টা করে যেতে হবে।

৫. যদি অসুস্থ ব্যক্তি কিছু দিন চেতনাহীন  আবস্থায় পড়ে থাকে। আবার কিছু দিনের জন্য চৈতন্য ফিরে পায়, তাহলে চেতনাবস্থায় সে যথা সাধ্য নামাজ আদায় করবে। আর অচেতন অবস্থার নামাজ গুলো তার কাযা করতে হবে না।  যদি অজ্ঞান অবস্থা খুব দীর্ঘ না হয়, যেমন মাত্র একদিনের জন্য অচেতন থাকা, এমন হলে যখনই সম্ভব প্রতিদিনের নামাজ আদায় করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ

কাযা নামায পড়ার সময় এই নিয়ম

কাযা নামায পড়ার সময় এই নিয়ত করতে হবে এভাবে আমি অমুক দিনে অমুক সময়ে কাজা নামায পড়ছি। আর যদি দিন ও তারিখ মনে না থাকে, তাহলে নিয়ত করতে হবে এভাবে: আমি আমার জীবনের প্রথম জোহরের নামাজ আদায় করছি। এভাবে কাযা নামাজ পড়ার সময় নির্ধারণ করতে হবে। আর সে কাযা নামায পড়তে থাকবে যতক্ষণ না ঐ ব্যক্তির মন সাক্ষ্য দেয় যে তার উপর কোন কাযা নামায নেই।

কাযা নামায পড়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল প্রতিটি নামাযের সময় কয়েকবার কাযা করা। যেমন, আসরের নামাযের আযানের পর একজন ব্যক্তি ঐ দিনের ফরয সালাত আদায় করার পূর্বে কাজা আসরের সালাত আদায় করে এবং তারপর ঐ দিনের সালাত আদায় করে। এভাবে যখন সে অনুভব করবে যে, তার আর কোন নামাজ নেই, তখন সে প্রতিদিনের নামাজের পরিবর্তে নফল নামাজের দিকে মনোনিবেশ করবে।

নফল নামাযের পরিবর্তে কাযা নামায পড়া ওয়াজিব ব্যক্তির জন্য উত্তম। কেননা তাকে কেয়ামতের দিন কাজা নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, নফল নামায সম্পর্কে নয়। কাজা নামাজ পড়ার সময় সূরা আল কারাত পাঠ করার সময়, একজনকে মূল নামাজের অনুকরণ করা উচিত। সফরে কেউ যদি কসরের নামায পড়ে যায়, তবে বাড়ি ফিরে তার কাযা কসর করতে হবে, অর্থাৎ চার রাকাতের পরিবর্তে দুই রাকাত। অনুরূপভাবে কেউ যদি সফরে বাড়ীতে কাযা নামায পড়ে তবে তার উচিত পূর্ণ নামায আদায় করা।

কাযা নামাজের নিয়ত

কাজা নামায এবং অন্য ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত একই রকম শুধু এইটুক পার্থক্য যে কাজা নামাজে (আন উসালি্লয়া) শব্দের জায়গায় (আন আকদিয়া) এবং যে নামাজ আদায় করছেন সেই নাম বলে আল ফাইতাতে বলতে হবে। 

Sharing Is Caring:

আসসালামুয়ালাইকুম! আশা করি আপনারা সবাই সুস্থ আছেন, আর যদি অসুস্থ থাকেন তবে দু’আ করি আল্লাহ আপনাকে শীঘ্রই সুস্থ করুন…আমরা অনেকেই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু এই জানার জন্য প্রয়োজন ভালো মানের বিশুদ্ধ ইসলামিক উৎস। যা অনলাইলে খুজে পাওয়া একটু কঠিন সে দিক চিন্তা করেই আমি প্রথন ইসলামিক বিষয় নিয়ে লেখা লেখি শুরু করি। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে নিজের ভাষায় লিখে আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ধন্যবাদ!

1 thought on “কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম ও বিধান”

Leave a Comment