স্বাস্থ্য : গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। আর এর যন্ত্রণা কতটা অস্বস্তিকর তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। পার্টিতে একটু ভাজা বা মশলাদার খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তি হতে পারে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে, সবাই ওষুধের দিকে ঝুঁকছে।
জেনে অবাক হবেন সারা দেশে যে পরিমাণ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয় তা অন্য সব রোগ মিলেও সেই পরিমাণের ওষুধ বিক্রি নয় না। কিন্তু ওষুধের উপর নির্ভর না করে আপনি যদি খাবারের প্রতি মনোযোগ দেন এবং কিছু নিয়ম মেনে চলেন তাহলে গ্যাস্ট্রিক আপনার কাছে আসতে পারবে না।
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সারাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ওষুধ রয়েছে। কিন্তু আমরা সহজেই ওষুধের পাশাপাশি ঘরে বসেই এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। চলুন দেখে নেই কিভাবে ঘরে বসেই গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাবেন। এই আর্টিক্যালের মাধ্যামে যেনে নিব গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি? আশা করছি বিস্তারিত পড়বেন।
![গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়](https://i0.wp.com/sahajjobd.com/wp-content/uploads/2023/07/%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.jpg?resize=840%2C441&ssl=1)
গ্যাস্ট্রিক কি?
শুরুতে জেনে নিব গ্যাস্ট্রিক কি? কেন হয়?
গ্যাস্ট্রিক আসলে কোনো রোগ নয়। এটি সাধারণত কিছু খারাপ অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা ভালো করেই জানেন এটা কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে।
এটি কখনও কখনও অন্য যে কোনও রোগের চেয়ে খারাপ রূপ নিতে পারে। কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এটি একদিনে সম্পূর্ণ নিরাময় নাও হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি একদিন সম্পূর্ণ অম্লতা মুক্ত হতে পারবেন।
বৈজ্ঞানিকভাবে যাকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়, আসল নাম পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি। পাকস্থলী, ডিওডেনাম এবং অন্ননালী—এই তিনটি অংশের যে কোনো একটি এসিড দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে পেপটিক আলসার রোগ বলে। আর যখন কেউ বলে যে তার গ্যাস্ট্রিক আছে, তখন বোঝতে হবে তার পেপটিক আলসার হয়েছে। এটি পাকস্থলী বা ডিওডেনাম যে কোন একটিতে হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস হয় কেন?
আমাদের দেশে গ্যাস্ট্রিকের প্রধান কারণ খাদ্যাভ্যাস দেখা যায়, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ সকালে খায় না। এটা একটা বড় কারণ। অনেকে ১২ বা ১ টার দিকে নাস্তা করেন অথবা একবারে দুপুরে খাবার খান সকালের খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে যান। সেক্ষেত্রে দেখা যায় এত দীর্ঘ সময়, রাতের খাবার এবং দুপুরের খাবারের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি হওয়ায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর বাইরে আরেকটি বড় কারণ রয়েছে। আমরা বেশির ভাগ মানুষেই অনেক রাত করে রাতের খাবার বেশি খাচ্ছি। আমাদের অফিসের সময়, আমাদের লাইফ স্টাইল এমন হয়ে গেছে যে বাসায় ফিরতে প্রায় ৮-৯টা বেজে যায়। প্রায়শই আমরা খুব দেরিতে খাবার খাই। দেরী করে খাওয়ার পরপরই আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। এটি গ্যাস্ট্রাইটিসের একটি বড় কারণও বটে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়
আমরা পূর্বেই জেনেছি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গগুলো হল পেটে জ্বালা-পোড়া করা, বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, খাওয়ার পর উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে অনুভব করা ইত্যাদি। সময়মতো খাবার না খাওয়া, বেশি ভাজা খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে বা, পর্যাপ্ত পানি পান না করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। জেনে নিন গ্যাস্ট্রাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া উপায়-
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে আলুর রস
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধের অন্যতম সেরা উপায় হল আলুর রস। আলুর ক্ষারীয় উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপসর্গ প্রতিরোধ করে।
এক বা দুটি আলু গ্রেট করুন। গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করুন। এরপর আলুর রসের সঙ্গে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে 3 বার পান করুন। প্রতিটি খাবারের 30 মিনিট আগে আলুর রস খান। তবে এই পানীয়টি অন্তত ২ সপ্তাহ পান করুন।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে আদা
আদার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় বুকজ্বালা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।
আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। বিকেলে এবং রাতে খাওয়ার আগে এই রস পান করতে পারেন।
দ্বিতীয় উপায়- আপনি চাইলে পানি দিয়ে আদা 10 মিনিট সিদ্ধ করুন, তারপরে সামান্য মধু যোগ করুন এবং এটিকে চায়ের মতো করে পান করুন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করলে উপকার পাবেন।
৩য় উপায়- আপনি চাইলে পুরো আদাও ধুয়ে চিবিয়ে নিতে পারেন।
৪র্থ উপায়- আদা সবচেয়ে কার্যকরী প্রদাহরোধী খাবারের মধ্যে একটি। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা পিষে লবণ দিয়ে খান, অল্প সময়ের মধ্যেই গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
আরও পড়ুন বিভিন্ন রোগ বালাই ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট সমুহ্-
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে দই
প্রতিদিন 2/3 চা চামচ দই খান। দই আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করে খাবার দ্রুত হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। দই আমাদের পাকস্থলীকে ”এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া” থেকে রক্ষা করে যা গ্যাস্ট্রাইটিসের প্রধান কারণ। তাছাড়া দই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দই মধু এবং কলা একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিয়মিত খেতে পারেন, এই মিশ্রনটি দ্রুত আপনার পেটের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহাজ্য করবে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে শসা
পেট ঠাণ্ডা রাখতে শসা খুবই কার্যকরী। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেটে গ্যাসের পরিমান কমায়।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পেঁপে
পেঁপেতে পেঁপে নামক এনজাইম থাকে যা হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে কলা এবং কমলা
কলা এবং কমলা পেট থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলায় থাকা দ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। দিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার কোন জুড়ি নেই।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে লবঙ্গ (লং)
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গে উপস্থিত একাধিক উপকারী উপাদান রয়েছে যা একবার শরীরে প্রবেশ করলে গ্যাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তাই বেশি খাওয়ার পর বুকজ্বালা ও ফোলাভাব হলে এক বা দুটি লবঙ্গ খেতে ভুলবেন না যেন!
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরায় উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ উপাদান শুধু ত্বকের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, হজমশক্তির উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পাকস্থলীতে তৈরি অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পুদিনা পাতার পানি
এক কাপ পানিতে ৫টি পুদিনা পাতা ফুটিয়ে সেবন করুন। পেট ফাঁপা ও বমি বমি ভাব দুর হবে।
রসুন
অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে ডাবের পানি
ডাবের পানি খেলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং সব খাবার সহজে হজম হয়। এছাড়া নিয়মিত বোতলজাত পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন বোতলজাত পানি পান করার চেষ্টা করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে দারুচিনির (ডালচিনি)
দারুচিনি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে কার্যকরী। দারুচিনি অ্যাসিডিটি, পেটের ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করে।
কফি, ওটমিল বা গরম দুধে দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন, দ্রুত ফল পাবেন। কিন্তু দুধের সমস্যা হলে দুধ খাবেন না।
আপনি চাইলে পানিতে দারুচিনির গুঁড়া ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে চায়ের মতো পান করতে পারেন। এতে সমস্যাও দূর হবে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে বেকিং সোডা
বেকিং সোডায় অ্যাসিডিক উপাদান রয়েছে এই উপাদান পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সাভাবিক পর্যয়ে নিয়ে আসে, ফলে গ্যাস দূর করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
খাবার নিয়ম হলে ১ গ্লাস পানিতে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশেয়ে পান করতে হয়। পেট খারাপ হলে এই মিশ্রণটি পান করুন। দ্রুত ভালো ফল পাবেন।
আরও পড়ুন বিভিন্ন রোগ বালাই ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট সমুহ্-
- পুরুষাঙ্গ না দাঁড়ানোর কারণ
- আমি মোটা হবো কিভাবে
- হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত ও অনুচিত
- কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
- ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
উপসংহার
এছাড়া ওজন কমানো, খাওয়ার সঠিক বিরতি, খালি পেটে চা না খাওয়া ইত্যাদি নিয়ম ঠিক রাখতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।
গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আপনাকে শুধু আপনার খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। উল্লেখিত খাবারের সাথে সাথে বেশি করে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। ওষুধ কিনতে এবং আপনার কষ্টার্জিত অর্থ অপচয় করার দরকার পরবে না।
সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQs)
১ টেবিল চামচ আদা ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পর্যন্ত শুকিয়ে গেলে তাতে ১-২ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন, ভালো ও দ্রুত ফল পাবেন। আপনি চাইলে নুন দিয়ে আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটাও খুব উপকারী হবে।
১ চামচ আদা বাটা ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পর্যন্ত শুকিয়ে গেলে তাতে ১-২ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন, ভালো ও দ্রুত ফল পাবেন। আপনি চাইলে নুন দিয়ে আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটাও খুব উপকারী হবে।
আপনি চাইলে পানি দিয়ে আদা 10 মিনিট সিদ্ধ করুন, তারপরে সামান্য মধু যোগ করুন এবং এটিকে চায়ের মতো করে পান করুন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করলে উপকার পাবেন।
সময়মতো খাবার না খাওয়া, বেশি ভাজা খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে বা, পর্যাপ্ত পানি পান না করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
১ চামচ আদা বাটা ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পর্যন্ত শুকিয়ে গেলে তাতে ১-২ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন, ভালো ও দ্রুত ফল পাবেন। আপনি চাইলে নুন দিয়ে আদা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটাও খুব উপকারী হবে।
বৈজ্ঞানিকভাবে যাকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়, আসল নাম পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি। পাকস্থলী, ডিওডেনাম এবং অন্ননালী—এই তিনটি অংশের যে কোনো একটি এসিড দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে পেপটিক আলসার রোগ বলে।