আজকে আমরা যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি তা আপনারা পোস্টের নাম শিরোনাম দেখেই বুঝতে পেরেছেন আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে আপনি একটি দলিল জাল কিনা বুঝতে পারবেন বা জাল দলিল চেনার উপায় ? আজকে পোষ্টা একটু বড় হতে পারে আশা করি সবাই শেষ পর্যন্ত পড়বেন, আর শেষ পর্যন্ত পড়লেই আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের সাথে ভালো কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বা শেয়ার করতে যাই হোক আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় ফিরে যাই। শুরুতে জেনে নিন জমির দলিল কি।
দলিল কাকে বলে ? বা দলিল কি ?
যে কোন লিখিত বিবরণ যা আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবে তাকে দলিল বলে।
জাল দলিল চিনবেন কিভাবে?
দেশের প্রচলিত আইনে জমির দলিল সম্পাদনে এক ধরণের বাধ্যবাধকতা প্রদান করা হয়েছে। আর এ দলিলই মূলত একটি জমির আইনগত ভিত্তি। কিন্তু এ জমি-জমা সংক্রান্ত দলিলসহ বিভিন্ন দলিলের জালিয়াতির ঘটনাও অহরহ ঘটছে এবং এ সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো দলিল সম্পাদন করে লোক ঠকানো, প্রতারণা বা অন্যায়মূলক কাজে সহায়তাদান আইনের দৃষ্টিতে একটি গুরুতর অপরাধ।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৪৬৩ ধারার বিধান মতাবেক পর্জালোচনা করলে জানা যায় যে, জালিয়াতির অপরাধের আবশ্যকীয় উপাদান দুটি, ১মতঃ হয়ারানী করার উদেএশ্য মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করা, ২য়তঃ প্রতারণা মূলক ইচ্ছা নিয়ে কোন মানুষের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে উহা করা।
জাল দলিল কি?
আপনারা নিশ্চয়ই ৪২০ বা ‘ফোর টুয়েন্টি’ শব্দের সাথে পরিচিত। যিনি প্রতারক বা প্রতারণার কাজের সাথে সম্পৃক্ত তাকেই সাধারণত এ নামগুলোতে ডাকা বা অপবাদ দেয়া হয়। দন্ডবিধির ৪১৫ ধারায় প্রতারনার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি ছলনা, প্রবঞ্চনা বা অসাধু উপায়ে অন্যের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে প্রবৃত্ত করে এমনকি অন্যের অনুকুলে প্রদানে প্ররোচিত করে, তবে সে ব্যক্তি প্রতারণা করেছে বলে গণ্য হবে।
দলিল জালিয়াতি কি ও কিভাবে হয়?
দণ্ডবিধির ৪৭০ ও ৪৭১ ধারা অনুযায়ী, জাল বা মিথ্যা দলিল হচ্ছে, যে দলিল জাল প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করা হয়েছে। এবং যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণা মূলক ভাবে কোনো জাল দলিল জেনে শুনে ইচছাকৃত ভাবে মূল দলিল হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি এই দণ্ডবিধি অনুযায়ী দায়ী হবেন এবং দলিল জালিয়াতির অপরাধে দন্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ৪৬৪ ধারায় মিথ্যা দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রথমত, কোনো দলিল কিংবা অংশবিশেষ এমন ব্যক্তি কর্র্তৃক প্রণীত স্বাক্ষরিত, সিলমোহরকৃত বা সম্পাদিত বলে বিশ্বাস জন্মানোর উদ্দেশ্যে, যা প্রকৃত ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি; দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর প্রতারণামূলকভাবে বাতিল করে; তৃতীয়ত, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণামূলক কোনো মাতাল বা মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি দ্বারা কোন দলিল স্বাক্ষরিত, সিলমোহর বা পরিবর্তন করান, যা বুঝতে অক্ষম, তা হলে এ ক্ষেত্রগুলোতে দলিল জালিয়াতি করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
জালিয়াতি মামলার শাস্তি
এ ধারার দুটো ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তাঁর নিজ নাম স্বাক্ষর করলেও যদি অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে জালিয়াতি হতে পারে। মৃত লোকের নামে মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করা হলে জালিয়াতি হিসেবে গণ্য হবে। মনু মিয়া বনাম রাষ্ট্র (৪২ ডিএলআর ১৯১) মামলায় বলা হয়েছে, কোনো দলিলকে জাল বলতে হলে অবশ্যই তা অসৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হতে হবে। যেমনঃ কামাল মামুনকে ৫০০/-টাকার একটি চেক দেয়, আর মামুন উহাতে আরও একটি বাড়তি শূণ্য (০) বসিয়ে ৫,০০০/- টাকা লিখে ব্যাংকে উপস্থাপন পূর্বক উক্ত টাকা গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় মামুন জালিয়াতি করেছে বলে গণ্য করা হবে। কেননা অপরকে প্রতারিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে কোন দলিল সম্পাদন করলে উহাকে জালিয়াতি বলা যায়।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে অনলাইনে জমির খতিয়ান/পর্চা পাবেন
দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দু বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে আদালতে নথিপত্র বা সরকারি রেজিষ্টার কাগজপত্র ইত্যাদিতে জালিয়াতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আদালতের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী বলে গণ্য কোনো কাগজ বা দলিল বা জন্ম নাম করণ বিয়ে বা শবসংক্রান্ত/ মৃতদেহ সম্পর্কিত রেজিষ্টার হিসাবে গণ্য বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন অথবা মামলার কোনো রায়ের কপি জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিন যোগ্য নয়। ৪
৬৭ ধারানুয়ায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মূল্যবান জামানত, উইল প্রভৃতি জাল করেন, তাহলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
১৯ ডিএলআর ৮৬২-এর মতে, ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ এ রকম জালিয়াতিতে সাহায্য করার কারণেও হতে পারে। ৪৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, ৪৬৬ ও ৪৬৭ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান আছে।
দলিল জালিয়াতির প্রতিকারের জন্য করনিয় কি?
জালিয়াতির প্রতিকারের জন্য দেওয়ানি আইনে চাইলেও দন্ডবিধি আইনে মামলা চলবে না একটা বিষয়ে ২টি পৃথক আদালতে মামলা-মোকদ্দমা চলবে না। কারণ এতে রেস-জুডিকাটা দোষে মামলাটি বাতিল হওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে পারে বা এর গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে। তবে জালিয়াতি-সংক্রান্ত কোনো কারণে যদি দেওয়ানি আদালতে দলিল বাতিলসহ স্বত্ব দখলের প্রতিকার কিংবা এ মর্মে ঘোষণামূলক প্রতিকার চাওয়া হয়, তবে ফৌজদারী আদালতে জালিয়াতির সাজা প্রদানের জন্য পৃথক মামলা করা যাবে কি-না, এসম্পর্কে নির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৫(১) ধারানুযায়ী, কোনো আদালত এমন কোনো অপরাধের প্রতিকার আমলে নেবেন না, যা কোনো দলিল সম্পর্কে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়, যা কোনো আদালতে বিচারধীন। অর্থাৎ জালিয়াতি সংক্রান্ত কোনো বিচার কার্যচলাকালে আদালতের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোনো দলিল জালিয়াতি-সংক্রান্ত ধারার অধীন অপরাধের বিচার অন্য আদালত করতে পারেন না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দলিল জালিয়াতির কারণে কোনো প্রতিকারের ক্ষেত্রে দেওয়ানি মোকদ্দমা চললে শুধু ওই আদালতের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোনো ফৌজদারি মামলা চলে না। বিচারাধীন আদালতের লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটই ওই অপরাধ আমলে নিতে পারেন।
জাল দলিল কিভাবে করে?
বণ্টননামার ক্ষেত্রে সহ-শরিকদের অজান্তে ভুয়া বণ্টননামা করে বা জাল দলিল করে।
এজমালি/ উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হওয়া সম্পত্তি অর্থাৎ ভাইবোন মিলে যে সম্পত্তি ভোগ করে থাকে, এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে দলিল তাদের নামেই করিয়ে নেয় । কোন ব্যাক্তিকে মালিকানা ছাড়াই দলিলদাতা সাজিয়ে বা কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়। এভাবেই জাল দলিল করা হয়।
আবার অনেক সময় দেখা যায় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়। সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না, সেই সব ক্ষেত্রে দলিল জালের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। কোথাও কোথাও মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতি করা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে অনলাইনে জমির খতিয়ান/পর্চা পাবেন
দলিল সংক্রান্ত সচরাচর জিজ্ঞাস্য
দলিল বাতিলের মামলার মাধ্যমে দলিল বাতিল করতে হয়। তবে মনে রাখাতে হবে। কিন্তু এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, কোনো দলিল বাতিলের পাশাপাশি দলিলটিকে বাতিল ঘোষণা করার জন্য এবং দলিলটিকে বাদীর জন্য ন্যায নয় মর্মে ঘোষণা করার জন্য, বাতিলের মামলার সাথে একটি ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে জমির রেকর্ড সংশোধন মামলা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আইনজীবীকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল/সিভিল কোর্টে রেকর্ড সংশোধনের জন্য একটি “ঘোষণামূলক” মামলা দায়ের করতে হবে। উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তির জমি ভুলবশত ১ নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা একই পদ্ধতিতে সংশোধন করতে হবে।
সাফ কবলা দলিল সহজ কথায়, সাফ কবলা দলিল হল দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির আইনি দলিলকে বুঝায়। কিন্তু, রিয়েল এস্টেটে, সাফ-কবলা বলতে সম্পত্তির বিক্রয় বা হস্তান্তরের লেনদেনকে বোঝায় এটিকেই সাফ কবলা দলিল বা বিক্রয় দলিল বোঝায়।
দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জালিয়াতি করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি দু বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে আদালতে নথিপত্র বা সরকারি রেজিষ্টার কাগজপত্র ইত্যাদিতে জালিয়াতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আদালতের নথিপত্র বা মামলার বিবরণী বলে গণ্য কোনো কাগজ বা দলিল বা জন্ম নাম করণ বিয়ে বা শবসংক্রান্ত/ মৃতদেহ সম্পর্কিত রেজিষ্টার হিসাবে গণ্য বা বা সরকারি সার্টিফিকেট জাল করেন অথবা মামলার কোনো রায়ের কপি জাল করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য নয়। ৪৬৭ ধারানুয়ায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি মূল্যবান জামানত, উইল প্রভৃতি জাল করেন, তাহলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হেেবন। ১৯ ডিএলআর ৮৬২-এর মতে, ৪৬৭ ধারার অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ এ রকম জালিয়াতিতে সাহায্য করার কারণেও হতে পারে। ৪৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, ৪৬৬ ও ৪৬৭ ধারা অনুযায়ী প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান আছে।
দানপত্র বা হেবাবিল এওয়াজ দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি হস্তান্তরিত সম্পত্তির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ২% ভাগ টাকা। দলিলের মূল্য ২৮,০০০ টাকা বা তার কম হলে নগদ অর্থে এবং বেশি হলে পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক এ, কোড নং ১৪২২২০১ তে জমা করতে হবে।