ডায়াবেটিস একটি জীবনব্যাপী শারীরিক অবস্থা যা প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময়ের নতুন উপায় নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। তবে ডায়াবেটিস পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। ইনসুলিন নামক একটি হরমোন আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনটি পেটের পিছনে অগ্ন্যাশয় নামক একটি গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত হয়। যখন খাবার হজম হয় এবং আপনার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে, তখন এই ইনসুলিন রক্ত থেকে চিনি (গ্লুকোজ) কোষে নিয়ে যায় এবং শক্তি উত্পাদন করতে সাহাজ্য করে। কিন্তু যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনার শরীর এইভাবে শক্তি উৎপাদনের জন্য চিনি এবং গ্লুকোজ ভেঙে ফেলতে পারে না।
ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাই ভালো। প্রাথমিক চিকিৎসা ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি ১০০ ভাগ কমে যায়।
এবার মূল আলোচনায় আশা যাক- আজকের মূল আলোচনার বিষয় হলে ডায়াবেটিস কিভাবে কমানোর যায়? বা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগে জানতে হবে ডায়াবেটিস কেন হয়? তাহলে চলুন দেখে নেই-
ডায়াবেটিস কেন হয়
আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তা মূলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। আর এই শর্করা হল গ্লুকোজের উৎস। রক্তে গ্লুকোজ প্রবেশের পর ইনসুলিনের ক্রিয়া শুরু হয়।
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা মানবদেহের কোষে গ্লুকোজ পরিবহন করে। সেই গ্লুকোজ থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়। এখন যদি কোনো কারণে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই বেড়ে যাওয়ার নামেই হলো ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস কিভাবে কমানোর যায়?
এক কথায় যখন কারো ডায়াবেটিস হয় তখন তার শরীরে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে শরীরের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গ্লুকোজ সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
নিউইয়র্কের ওয়েইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবার যে ক্রমানুসারে খাওয়া হয় তার পাশাপাশি সঠিক খাবার খাওয়ার ওপর রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই নির্ভর করে। গবেষকদের মতে, প্রথমে কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় কারণ শাকসবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার আগে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যায়। প্রোটিন ও শাকসবজি খাওয়ার আগে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দুই ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ কমে যায়।
শুধু শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণই করে না, আপনি যে ক্রমে খাবার খান তা বার্ধক্যজনিত লক্ষণ, শরীরের ওজন এবং হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকদের মতে, প্রথমে প্রোটিন ও শাকসবজি খেলে চিনিযুক্ত খাবারের আগে শরীরে ফাইবার পৌঁছায়। ফলে হজমের গতি ধীর হয়ে থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এভাবে খেলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, প্রদাহ কমে যায় এবং ত্বক ভালো থাকে। ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ কম পড়ে।
প্রতিদিনের অনিয়মিত খাওয়া দাওয়ায়, অতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া- এসবই ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সেই কারণে ডায়াবেটিসের সমস্যার মোকাবেলা করতে হলে খাদ্যাভ্যাসেও জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। ডায়েটে এমন কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকরা ব্যায়াম, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ এবং ডায়াবেটিসের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।
কোন রোগীর জন্য কোন ধরনের ডায়েট আদর্শ তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে কিছু খাবার আছে যেগুলো সব ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। এখন আমরা এমন কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করব। জেনে নিন যে খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে-
ডায়াবেটিস কমাতে চর্বিযুক্ত মাছ
ফ্যাটি বা চর্বিযুক্ত মাছের মধ্যে রয়েছে স্যামন, সার্ডিন, হেরিং ইত্যাদি। এই মাছ ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, যা ডিএইচএ এবং ইপিএ-এর বড় উৎস, এই সামদ্রিক মাছ গুলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এই সব মাছ নিয়মিত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো।
মাছ ভিটামিন ডি এর একটি চমৎকার উৎস
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে এবং প্রায় কোনো ক্ষতিকারক চর্বি থাকে না। সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ প্রজাতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে যখন স্বাস্থ্য সুবিধার কথা আসে, তখন সমস্ত সামুদ্রিক খাবারই পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে। সামুদ্রিক খাবারে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাট, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন এ। এই পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।
ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মাছে পাওয়া পুষ্টির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে শুধু ডায়াবেটিসের উপকার হবে না। বরং আরও অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। শুধু তাই নয়, এটি কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে, যার কারণে আপনি হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা থেকে দূরে থাকেন।
ফাইবার
মাছেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই ফাইবার আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কাজ করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ইতিবাচক প্রভাব প্লাজমা লিপিড স্তরেও দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে, এর মাধ্যমে আপনি গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ভিটামিন বি ১২
একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ভিটামিন বি 12 এর ঘাটতি টাইপ -2 ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সাধারণ। শুধু তাই নয়, গবেষণা এমনকি পরামর্শ দেয় যে ভিটামিন বি 12 ঘাটতি বয়স্ক, প্রাপ্তবয়স্কদের এবং মেটফর্মিন দিয়ে চিকিত্সা করা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।
প্রোটিনের জন্য
গবেষণা অনুসারে, মাছ উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। মুরগি বা মাটনের চেয়ে মাছ আপনার জন্য ভাল। টুনা মাছের ডিম এবং টার্কি আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে ইনসুলিন ফাংশন উন্নত করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস কমাতে সবজি
প্রতিদিন নিয়মিত শাকসবজি খান। প্রয়োজনে মাছ-মাংসের পরিবর্তে সমান পরিমাণে শাকসবজি খান। এতেও শরীর সুস্থ থাকবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কোন ধরনের সবজি খেতে হবে?
সবজি দুই প্রকার। উচ্চ প্রোটিন এবং কম প্রোটিন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজিতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। ফলে এগুলো খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি কম খান। এ কারণে মিশ্র সালাদ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। টমেটো, লেটুস, শসা, পেঁয়াজ, মটরশুটি, গাজর, মুলা, ধনেপাতা ইত্যাদির মিশ্রণ দিয়ে সালাদ তৈরি করুন। দুপুরের খাবারের আগে এমন সালাদ খেলে পেট অনেকটাই ভরে যায়। কম ক্ষুধা তদ্ব্যতীত, শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই এটি পুষ্টিকর।
লেটুস, পালং শাক, বাঁধাকপি ইত্যাদির মতো শাক-সবজি খান, যেগুলোতে স্টার্চ কম এবং উচ্চ ফাইবার থাকায় ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। লাল, হলুদ ইত্যাদি রঙিন শাকসবজি লাইকোপিন, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন এ ইত্যাদিতে ভরপুর। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হার্ট, ত্বক ও চোখ ভালো থাকে। লেটুস, কালো মটরশুটি, পালং শাক, মটরশুটি, ব্রকলি ইত্যাদি সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ব্রকলি, বাঁধাকপি, পালং শাক, ভুট্টা, মটরশুটি, বীট, মেথি, ফুলকপি, শসা, কলার্ড শাক, মাশরুম, মটর, করলা, ক্যাপসিকাম, লেটুস, টমেটো ইত্যাদি সবজি রক্তে শর্করার পাশাপাশি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। কোলেস্টেরল বাড়াতে বাধা দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
ডায়াবেটিস কমাতে ভিটামিন সি
শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। এতে চোখ, হার্ট ভালো থাকবে।
আরও পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস কমাতে ডিম
শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ডিম যতেষ্ঠ ভূমিকা রাখে। আর তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খান। এই ক্ষেত্রে, সিদ্ধ ডিম সবচেয়ে ভাল। হৃদরোগীরাও নির্ভয়ে ডিম খেতে পারেন।
কিছু ব্যক্তির উপর করা এক গবেষণায়, ইউনিভার্সিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে যারা নিয়মিত ডিম খান তাদের মধ্যে তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইল এমন স্তরে ছিল তাদের ডায়াবেটিস হয়নি।
টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের জন্য ডায়েট একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। টাইপ 1 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীর ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা অপর্যাপ্ত বা অকার্যকর। অর্থাৎ তাদের শরীরে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম থাকে।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি ডিমে থাকে ১০.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখে। এটিতে বায়োটিন নামক আরেকটি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের ইনসুলিন তৈরি করতে প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ডিমের বিরুদ্ধে অনেক যুক্তি রয়েছে। এতে প্রচুর কোলেস্টেরল রয়েছে। অনেক গবেষক প্রমাণও পাওয়ারও দাবি করেছেন যে অনেক বেশি ডিম খেলে সুস্থ মানুষের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই ডিম নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।
ডায়াবেটিস কমাতে ডুমুর
পুষ্টিবিদদের মতে, ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ডুমুরে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি কি জানেন কোন ধরনের ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি সহায়ক?
ডুমুর শুকনো এবং তাজা উভয়ই পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা সবসময় তাজা ডুমুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ শুকনো ডুমুরে তাজা ডুমুরের চেয়ে বেশি ক্যালরি এবং চিনি থাকে। আর শুকনো ডুমুরে যেহেতু চিনির পরিমাণ বেশি তাই এগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে ডুমুর পাতা ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতেও উপকারী।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডুমুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। ডুমুর পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ। এছাড়াও ডুমুরে আছে পেকটিন- যা আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদদের মতে, এক কাপ পানিতে দুই থেকে তিনটি ডুমুর সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে, জল ছেঁকে খালি পেটে খান। এতে শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমনি অনেক শারীরিক সমস্যাও দূর হবে। এতে পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেও ডুমুরের দারুণ ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, যা থেকে জানা যায়, মেনোপজের পর অনেক মহিলাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আর তাই ডুমুরের তরকারি বা ডুমুর ভেজানো পানি খেলেও এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৪ শতাংশ কমে যায়।
ডায়াবেটিস কমাতে মটরশুটি
মটরশুটিতে খুব কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে। এছাড়াও পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মটরশুটি খুবই ভালো। ব্রকলিও খেতে পারেন। এতে মোটেও কার্বোহাইড্রেট নেই, তবে পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
ডায়াবেটিস কমাতে টক দই
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, ওজন কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে টকের মিশ্রণ। প্রতিদিন সামান্য টক দইবা দুগ্ধজাত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে দেওয়া যায়। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে এই খাবারটি হওয়া উচিত নন-ফ্যাট বা নন-ডেইরি দুধ থেকে তৈরি খাবার। এই গবেষণার ফলাফল বিশ্ববিখ্যাত ডায়াবেটোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কম চর্বিযুক্ত বা নন-ডেইরি পনির এবং দইয়ের ইতিবাচক দিকগুলির দিকে তাকালে এই ফলাফলগুলি পাওয়া যায়।
গবেষকরা বলছেন যে যারা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১২৫ গ্রাম নন-ডেইরি দই খান তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অন্য খাবারের তুলনায় ২৪ শতাংশ কমানো সম্ভব। যাইহোক, দুগ্ধজাত খাবার ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে এমন সঠিক প্রক্রিয়া এখনও অস্পষ্ট। সম্ভাব্য প্রক্রিয়াগুলো হলো- দুধে থাকা প্রোবায়োটিক সকল মেটাবলিজম অঙ্গকে সুস্থ রাখে, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন ডি মেটাবলিজমকে সচল রাখে। গবেষকরা তাই প্রতিদিন খাবারের পরে বা জলখাবার হিসাবে নন-ডেইরি দই, টক দই খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাবেন।
ডায়াবেটিস কমাতে চিয়া বীজ
চিয়া বীজ বা চিয়া সিডস ফাইবার সমৃদ্ধ। যা আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। চিয়া বীজ ওজন নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর। এটি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাবেন।
চিয়া বীজ ‘প্রিডায়াবেটিস’ বা ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’-এ আক্রান্তদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। এই বীজ-জাতীয় খাবারগুলি নিয়মিত মুদি দোকানে পাওয়া যায় না, তবে সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। এটি প্রোটিন এবং ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ। যা হজম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা অসামান্য।
দ্যা ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন অনুসারে, প্রতিদিন চিয়া বীজ খেলে ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা কমে যায়। আর এটাই ডায়াবেটিসের প্রধান সমস্যা।
2021 সালে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায়, প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের একটি গ্রুপকে ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম ‘চিয়া বীজ’ খাওয়ানো হয়েছিল। আরেকটি গ্রুপ এটি খাওয়ানো হয় না. উভয় গ্রুপ এই সময়ের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য অনুসরণ করেছিল, একইভাবে একই পরিমাণে ব্যায়াম করেছিল । পলাফলে দেখা যায় যে যারা ‘চিয়া বীজ’ খেয়েছিলেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অন্য গ্রুপের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।
এই গবেষণার পরে ইটদিস ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে ‘চিয়া সিড’-এর উপকারিতার পিছনে প্রধান ভূমিকা হল এর ভোজ্য ফাইবার। যা সল্যুবল ফাইবার। আপেল, ওটস, মটরশুটি ইত্যাদিতেও এই ধরনের ফাইবার পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস কমাতে তিসিবীজ
তিসিবীজের লাড্ডু মুখে দিলে ওহ। তিসিবীজ হেনশেলের মশলাগুলির মধ্যে একটি। তিসি তেলের গুণাগুণ এত বেশি যে বলে শেষ করা যাবে না। তিসিবীজে রয়েছে ফাইবার, ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি বড় উৎস।
রক্তচাপ থেকে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস থেকে ক্যান্সার। তিনির বীজ সব রোগের নিরাময়। এক চামচ ফ্ল্যাক্সসিড প্রোটিন সমৃদ্ধ। তিসি খান। তাহলেই হাজারো রোগ দূর হয়ে যাবে।
সির লাড্ডু। মুখে দিলে ওহ। ফ্ল্যাক্সসিড শুধুমাত্র হেনশেলের মশলাগুলির মধ্যে একটি। তিসি তেলের গুণাগুণ বাড়াবাড়ি করা যাবে না। শণের বীজ ফাইবার, ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি বড় উৎস।
তিসিবীজে এর পুষ্টিগুন কি কি?
- ১০০ গ্রাম তিসি বীজে রয়েছে
- ৫৩৪ ক্যালরি,
- ১৮.২৯ গ্রাম আমিষ,
- ২৭.৩ গ্রাম স্নেহ,
- ২৮.৮৮ গ্রাম শর্করা,
- ১.৬৪ মিলিগ্রাম থায়ামিন,
- ০.১৬১ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন,
- ৩৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম,
- ৬৪২ মিলিগ্রাম ফসফরাস,
- ৮১৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম,
- ৪.৩৪ মিলিগ্রাম জিঙ্ক,
- ০.১৭৪ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ,
- ৬ মাইক্রোগ্রাম ফলেট।
সত্যি বলতে কী এত পুষ্টিগুণ সম্পুর্ন খাবার খুব কমই আছে।
শনির বীজ শরীরের জন্যও ভালো। নিয়মিত খেলে সুগার ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু এটি কোলেস্টেরলের সমস্যায়ও ভালো কাজ করে। ফ্ল্যাক্সসিড ইনসুলিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস কমাতে লাউ
করলা ডায়াবেটিস কমাতে একটি ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। করলা ইনসুলিন-পলিপেপটাইড-পি সমৃদ্ধ, যা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার মাত্রা বাড়াতে সক্ষম। করলাতে ক্যারোটিন এবং মোমরডিসিন নামক দুটি প্রয়োজনীয় যৌগ রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস কমাতে সপ্তাহে একবার করলার তরকারি খান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস এই জুস পান করুন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
ডায়াবেটিস কমাতে আমের পাতা
আম পাতা আপনাকে শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কোমল আমের পাতা ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাজা আম পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিত্সার জন্য কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার। আমের পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, এ এবং ট্যানিন যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক চিকিৎসায় সাহায্য করে। ডায়াবেটিস কমাতে আম পাতা ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করুন। প্রতিদিন সকালে ও রাতে পানির সাথে এই গুঁড়ো পান করুন। এক গ্লাস পানিতে কিছু তাজা আম পাতা সিদ্ধ করে সারারাত ঠান্ডা হতে দিন। সকালে খালি পেটে এর পানি পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস কমাতে মেথি
মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে কারণ এতে ফাইবার বেশি থাকে। মেথি খেলে হজম শক্তি কমে যায়, ফলে রক্তে শর্করা ঠিকমতো শোষিত হয়। এটি টাইপ-1 এবং টাইপ-2 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে 2 চা চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি বীজের সাথে সেই পানি পান করুন। এছাড়াও, প্রতিদিন গরম বা ঠাণ্ডা জল বা দুধের সাথে মেথি বীজের গুঁড়ো খান।
ডায়াবেটিস কমাতে গায়নুরা প্রোকাম্বেন্স
‘গাইনুরা প্রোকাম্বেন্স’ নামের এই ঔষধি গাছটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এটি চীনে অ্যান্টিভাইরাস হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। ‘গাইনুরা প্রোকাম্বেন্স’ উদ্ভিদের বোটানিক্যাল নাম হলেও ইংরেজিতে একে ‘সাবুঙ্গা’ এবং চীনে ‘জিয়ান ফেং ওয়েই’ বলা হয়। যাদের ডায়াবেটিস, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল আছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২টি পাতা খেলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন এবং গ্যাস্ট্রাইটিসে ভুগছেন তাদের সকালে খালি পেটে ২টি পাতা এবং রাতে ঘুমানোর আগে ২টি পাতা খাওয়া উচিত।
যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের এখনই ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা উচিত। নিয়মিত আপনার চিনির মাত্রা পরীক্ষা করুন। নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খান। সারাদিন হাঁটার জন্য অন্তত এক ঘণ্টা বরাদ্দ রাখুন। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুনঃ
- চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম
- কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়
ডায়াবেটিসের লক্ষণ কি কি
আসুন জেনে নিই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
- ঘন ঘন ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব হওয়া
- তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
- চোখে ঝাপসা দৃষ্টি অনুভব হওয়া
- অল্পতে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে
- মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে মাথাব্যথা হওয়া
- শুষ্ক মুখ – মুখ শুকিয়ে যাওয়া
আমাদের কথা
কোন রোগীর জন্য কোন ধরনের ডায়েট আদর্শ তা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাই আমরা মনে করি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলতে পারলে ডায়াবেটিস রোগীরাও সুস্থ্য জীবন যাপন করে পারবেন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনায়, আজকে মত এখানেই বিদায়।
সাধারনত খালি পেটে মানুষের শরীরের রক্তে সুগারের মাত্রা থাকে ৫.৫ পয়েন্টের (mmol/l) আশেপাশে বা নিচে । তবে যদি ৫.৫ থেকে ৬.৯ পয়েন্টের মধ্যে থেকে থাকে তাহলে এই অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিকস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। যদি কারো ৭ পয়েন্টের উপরে চলে যায় তাহলে সেই অবস্থাকে তাকে ডায়াবেটিস বলে।
গবেষকদের মতে, প্রথমে কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় কারণ শাকসবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার আগে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যায়। প্রোটিন ও শাকসবজি খাওয়ার আগে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দুই ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ কমে যায়।
আমরা যে খাবার গ্রহণ করি তা মূলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। আর এই শর্করা হল গ্লুকোজের উৎস। রক্তে গ্লুকোজ প্রবেশের পর ইনসুলিনের ক্রিয়া শুরু হয়।
ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা মানবদেহের কোষে গ্লুকোজ পরিবহন করে। সেই গ্লুকোজ থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়। এখন যদি কোনো কারণে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই বেড়ে যাওয়ার নামেই হলো ডায়াবেটিস।