হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসা

হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি জটিল রোগ। তারপরও এ রোগে আক্রান্ত হয়েও ভালো থাকা সম্ভব। সে জন্য দরকার নিয়ম মাফিক জীবন যাপন। নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে অ্যাজমা হাঁপানি মত রোগেও ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়।

সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ সাধারণ শ্বাসকষ্ট – হাঁপানি রোগে ভুগছে । তাদের মধ্যে ৯০% এর বেশি উন্নত চিকিৎসা পায় না এবং প্রতি বছর অনেক রোগী উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। আধুনিক চিকিৎসা ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে উপায় শেখানো গেলে এই মৃত্যুর ৮০% প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আজকে আমরা হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব আশা করছি আজকের লেখাটি মনযোগ সহকারে সম্পুর্ন পড়বে। শুরুতে কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক-

হাঁপানি বা অ্যাজমা কী

হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসা
হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসা

হাঁপানি বা অ্যাজমা আসলে শ্বাসনালীর একটি রোগ। যদি কোনো কারণে শ্বাসনালী অতিরিক্ত সংবেদনশীল (অতি সংবেদনশীল) হয়ে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়, তাহলে বায়ু চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বা নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

হাঁপানি রোগের লক্ষণ কি কি?

হাঁপানির প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণগুলো হল: বুকে শ্বাসকষ্ট হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া, শ্বাসকষ্ট অর্থাৎ পূর্ণ শ্বাস নিতে না পারা, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাঁট ভাব বা দম বন্ধ হওয়া, রাত জেগে ওঠা, বেশিরভাগ সময় সেখানে সর্দি, নাক চুলকায় এবং অসহ্য হাঁচি।

তবে প্রধান লক্ষন হলো

* ঘন ঘন কাশি

* বুকে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া

* বুকে চাপ সৃষ্টির অনুভব হওয়া

* রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া

হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারন কি?

কারও কারও ক্ষেত্রে জেনেটিক এবং পরিবেশগত অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি ধূলিকণা, পোকামাকড়, ফুল বা ঘাসের পরাগ কণা, পাখির পালক, পশুর পশম, ছত্রাক, কিছু খাবার, কিছু ওষুধ, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা কাদের হতে পারে?

নারী-পুরুষ যে কোনো বয়সের, শিশু-কিশোর যে কেউ হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের হাঁপানি তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যদি দাদা-দাদির এই রোগ থাকলে (এমনকি বাবা-মা না থাকলেও) নাতি-নাতনি বা তাদের সন্তানরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পিতৃপক্ষের তুলনায় মায়ের দিক থেকে হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্য দিকে অ্যাজমার প্রধান কারণ অ্যালার্জি।

হাঁপানি রোগীদের করনিয়

যে জিনিস থেকে হাঁপানির আক্রমণ শুরু হয়েছে সেগুলো থেকে দূরে সরে থাকার চেষ্টা করুন। খুব বেশি হলে প্রয়োজনে ৫ মিনিট পর পর সালবুটামলজাতীয় ওষুধের ইনহেলার ব্যবহার করুন । শান্ত থাকার চেষ্টা করুন, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করুন, স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।

হাঁপানি রোগীদের কখন ডাক্তারের সহায়তা নেওয়া জরুরি

যদি উপরে উল্লেক্ষিত উপায়ে ভালো বা স্বাভাবিক অনুভব না করেন তাহলে ডাক্তারের কাছে জরুরি সহায়তার জন্য যাওয়া উচিৎ। যদি নিচের হাঁপানির এ বিপদ সংকেত গুলোর কোনো একটি দেখেন তাহলে দ্রুত সাহায্য নিন।

* আপনার চটপট আরামের ওষুধ (ইনহেলার) যদি খুব বেশিক্ষণ কাজ না করে বা তাতে একেবারেই উপকারে না আসে।

* শ্বাস-প্রশ্বাস যদি দ্রুত ও জোরে জোরে হতে থাকে।

* যদি কথা বলতে খুব কষ্ট হয়ে থাকে।

* ঠোঁটে বা আঙুলের নখ নীল বা ছাইরঙের হতে থাকে।

* পাঁজরের চারপাশে ও বুকের নিচের চামড়া শ্বাস নেয়ার সময় ভেতর দিকে টেনে ধরে থাকে।

* হঠাৎ করে স্পন্দন বা নাড়ির গতি অত্যন্ত দ্রুত ও হাঁটা চলা করতে কষ্ট হয়ে থাকে।

যেসব জিনিস থেকে হাঁপানির আক্রমণ শুরু হয় সেগুলো বাড়ি থেকে দূরে রাখুন। এজন্য হাঁপানি রোগীদের অ্যালার্জি তার কোন দ্রব্যাদি থেকে অ্যালার্জি শুরু হয় তা পরীক্ষা করে জানা দরকার । হাঁপানি রোগে আক্রান্ত অনেকেরই পশুপাখির লোমে অ্যালার্জি থাকে তাই এসব প্রাণী যতটা সম্ভব বাড়ির বাইরেই রাখুন।

হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসায় ভ্যাকসিন

নানা ধরনের এ্যাজমার ওষুধ আছে বাজারে। ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজন মতো ওষুধ ব্যবহার করে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন ।

হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসায় ভ্যাকসিন
হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসায় ভ্যাকসিন

এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপিঃ এ্যাজমা বা হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো, রোগীর যে এলার্জি থেকে শ্বাসকষ্ট হয় তা যতদুর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই এ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার কোন ধরনের এলার্জি থেকে তার শ্বাসকষ্ট হয় ।

বর্তমানে এলার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপিঃ এ্যাজমা বা হাঁপানির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পন্থা হলো, রোগীর যে এলার্জি থেকে শ্বাসকষ্ট হয় তা যতদুর সম্ভব এড়িয়ে চলা। তাই এ্যাজমা রোগীদের প্রথমেই এলার্জি টেস্ট করে জানা দরকার কোন ধরনের এলার্জি থেকে তার শ্বাসকষ্ট হয় । বর্তমানে ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিনও এ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ।

এলার্জি ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য হলো যে এলার্জেন দিয়ে রোগীর এ্যাজমা বা হাঁপানীর সমস্যা হচ্ছে সেই এলার্জেন স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, যাতে পরবর্তিতে ঐ এলার্জেন দিয়ে রোগী শ্বাসকষ্টে বা এ্যাজমাতে যেন আক্রান্ত না হয়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। আমেরিকান একাডেমী অব এলার্জি এ্যাজমা এন্ড ইমুনোলোজী, ইউরোপিয়ান একাডেমী অব এলারগোলজী এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী, জাপানিজ সোসাইটি অব এলারগোলজী, ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক্স এলার্জি এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিস, ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এলারগোলোজী এন্ড ক্লিনিক্যাল ইমুনোলোজী একত্রিত হয়ে এলার্জি সৃষ্টিকারী দ্রব্যাদি বা এলার্জেনের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকমূলক এলার্জেন বা ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপির ব্যবহারের দিকনির্দেশনা তৈরি ও ব্যবহার করেন।

এলার্জি জনিত এ্যাজমা বা হাঁপানির ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকারী বলে অভিমত প্রকাশ করেন বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। এই ভ্যাকসিন পদ্ধতির চিকিৎসাকে এলার্জি জনিত এ্যাজমা রোগের অন্যতম চিকিৎসা বলে অভিহিত করেন। এটাই এ্যাজমা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।

আগে ধারণা ছিল এ্যাজমা একবার হলে আর সারে না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে এলার্জি জনিত এ্যাজমা রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা জরুরী। বর্তমানে এলার্জি জনিত এ্যাজমা রোগের ভ্যাকসিনসহ উন্নত চিকিৎসা আমাদের দেশেই হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ

হাঁপানি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

পোস্টের শুরুতে বলেছি নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে অ্যাজমা বা হাঁপানি মত রোগ নিয়েও ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায় তাহলে চলুন দেখে নেই কি সেই নিয়ম-

হাঁপানি রোগীদের যে নিময় মেনে চলতে হবে

হাঁপানি রোগীদের প্লেইন লিনেন কাপর দিয়ে বিছানা তৈরি হবে যাতে দুলা বা বালী কনা না থাকে। ঘরের মেঝে দিনে দুবার পরিষ্কার করতে হবে। রোগীর বিছানার চাদর প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে অথবা রোদে শুকাতে হবে। যে বস্তু থেকে ধূলিকণা জন্ম হয় সেগুলিকে ঘর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যেসব জিনিস থেকে ধুলো উড়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকবে হবে।

হাঁপানি রোগীর ঘর যেভাবে সাজাতে হবে

ঘরের মেঝে কার্পেট তা ঘর থেকে কার্পেট সরিয়ে ফেলুন। কারন কার্পেট প্রচুর প্ররিমানে ধুলো সংগ্রহ করে। এছাড়াও নরম চেয়ার কুশন এবং অতিরিক্ত বালিশ ঘর থেকে বের করে ফেলুন কারন সেগুলোতেও ধুলো জমে থাকে। গদি এবং বালিশে একটি বিশেষ ধুলোরোধী কভার ব্যবহার করুন বা অন্তত একটি পাতলা রেক্সিন কভার ব্যবহার করতে পারেন।
মশলা, মশার স্প্রে, পারফিউমের মতো কোন তীব্র গন্ধ নাকে প্রবেশ করানো থেকে বিরত থাকুন।

ধুলো, ধোঁয়া, ঠান্ডা বা কুয়াশা শরীরে লাগানো উচিত নয়। রাস্তার ধুলো, পুরনো বাড়ির ধুলো, গাড়ির ধোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করহে করুন। যারা বাইক বা নন-এসি যানবাহন চালান তাদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।

হাঁপানি থেকে বাচতে ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে

সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানিকে মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তোলে। ধূমপান শুধু হাঁপানিই নয় ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের অনেক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রথমে ব্রঙ্কাইটিস হয়, তারপর ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হয়। হাঁপানি রোগীরা যে ঘরে থাকে সেখানে ধূমপান করা যাবে না। হাঁপানি রোগীদের নিজেরাই ধূমপান করা কোন ক্রমেই উচিত নয় । কারণ অন্যের করা ধূমপানের ধোয়াও হাঁপানির রোগীর কষ্ট অনেক বাড়িয়ে তোলে।

পরিষ্কার এবং তাজা বাতাসের জন্য ঘরের জানালা খোলা রাখুন। ঘরে রান্নার থেকে তীব্র গন্ধ আসলেও শ্বাসরোধের জন্য জানালা খুলে রাখতে পারেন। কাঠ বা কেরোসিন দিয়ে রান্না করলে ধোঁয়া বেরোতে দেওয়ার জন্য ঘরের জানালা খোলা রাখা উচিৎ যাতে ধোয় বের হয়ে যায়। বাইরে যখন প্রচুর গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার দূষণ, ফুল ও গাছের ধুলো বা পরাগ থাকে, তখন জানালা বন্ধ রাখুন।

হাঁপানি থেকে বাচতে ব্যায়াম

লম্বা হতে উষ্ট্রাসন যোগব্যায়াম
লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যাতে বেশি ব্যায়ামের জন্য হাঁপানির টেনশন না হয়। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো হাঁপানি রোগীদের জন্য ভালো ব্যায়াম। হাঁটার সময় সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। মাথা সোজা রেখে সমতল মাটিতে খোলা বাতাসে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কিমি হাঁটার চেষ্টা করুন।

এর সঙ্গে প্রাণায়ামের মতো গভীর শ্বাস নেওয়ার আসন – উদাহরণস্বরূপ, যতক্ষণ সম্ভব ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, তারপর যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ধরে রাখুন এবং তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ব্যায়াম এবং খেলাধুলার সময় শিশুদের কোনো অসুবিধা বা শ্বাসকষ্টের জন্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। মাঠে খেলার আগে ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

চাপমুক্ত থাকুন: যেকোনো কারণে ভয়, মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা শোকও হাঁপানির কারণ হতে পারে। তাই মনকে টেনশনমুক্ত রাখতে হবে, শরীরকে শিথিল রাখতে হবে।

হাঁপানি রোগীর অনুপস্থিতিতে কিছু কাজ সম্পাদন করা উচিৎ যেমন- ঘর পরিষ্কার করা, ভ্যাকুয়াম করা বা ঝাড়ু দেওয়া, পোকা মাকড়ের স্প্রে করা, তীব্র গন্ধযুক্ত রান্না করা, রোগী বাড়ি ফেরার আগে বাতাস বের করুন।

হাঁপানি থেকে বাচতে পানি

হাঁপানির চিকিৎসার সময় রোগীর প্রচুর পানি পান করা উচিত। কারণ শরীরে পানির ঘাটতি হলে হাঁপানির ওষুধ কাজ করে না। এছাড়া পানির অভাবে কফ জমে সহজে বের হতে পারে না, ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।

খাওয়া-দাওয়া: রাতে পেট ভরে খেলে হাঁপানি টান বাড়তে পারে। তাই রাতে ভরা পেট খাবেন না। হাঁপানি প্রতিরোধে নিয়ম মেনে সময় নিয়ে খেতে হবে, অকারণে তাড়াহুড়া করবেন না, ঝাল মসলা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে হালকা রান্না করা ঘরোয়া খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাবার ফ্রিজ থেকে বের করার সাথে সাথে খাওয়া উচিত নয়। রুম টেম্পারেচারে খাবার এলে তবেই খাবেন, প্রচন্ড গরমেও ঠান্ডা পানীয় বা ফ্রিজের পানি খাওয়া উচিত নয়।

হাঁপানি রোগীর ঘরের তাপমাত্রা

শীতকালে ঘর গরম রাখা ভালো। ঘরে এয়ার কন্ডিশনার থাকলে অনেক সময় ধুলো-ময়লা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু সেজন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের বাইরে বারবার যাওয়া আসা করা উচিত নয়। এয়ার কন্ডিশনার ডিভাইসের বাতাস যেন সরাসরি শরীরে না আসে তাও খেয়াল খারা জরুরী।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করুন। অনেক সময় ডাক্তার ইনহেলার লিখে দিলেও রোগী বা রোগীর অভিভাবকরা তা ব্যবহার করবেন কি করবেন না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। মনে করে একবার ব্যবহার করলে সারাজীবন চলবে। বিশেষ করে এটি যখন এক বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া হয়। মনে রাখবেন ইনহেলার এখন উন্নত বিশ্বের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। এতে পরিমাণে কম ওষুধের প্রয়োজন পরে এবং দ্রুত কাজ করে। এটা ঠিক নয় যে একবার ইনহেলার ব্যবহার করলে সারাজীবন ধরে করতে হবে।

তাছাড়া রোগীদের চিকিৎসায় অ্যালার্জির ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং তা সঠিকভাবে দিতে হবে। অনেকে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এটি আধুনিক চিকিৎসার একটি অংশ। দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুনঃ

আমাদের কথা

আগে মনে করা হত যে একবার হাঁপানি হলে তা আর নিরাময় করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। অ্যালার্জিক অ্যাজমা তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়। যদি অবহেলা করা হয় এবং রোগটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তবে নিরাময় করা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে অ্যালার্জিক অ্যাজমার ভ্যাকসিনসহ উন্নত চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করুন। সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন। ভালো লাগলে পোস্ট সোস্যাল মিডিয়ায ছড়িয়ে দিন।

হাপানি বা এজমা কেন হয়?

বংশগত কারণ এবং পরিবেশগত কারণে হাঁপানি রোগ হয়ে থাকে। পরিবেশগত কারন গুলো হলো ঘরের জমে থাকা ধুলো, রাস্তার থাকা ধুলো বালি, বিছানার পোকা, কার্পেট জমে থাকা ধুলো, পুরনো আসবাব জমে থাকা ধুলো, দূষণ বাতাস, অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ এগুলোকে হাঁপানি রোগের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়। সমাজে একটি প্রচলিত ধারনা রয়েছে যে, হাঁপানি সংক্রামক ও ছোঁয়াচে। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়।

এজমা রোগ কেন হয়?

বংশগত এবং পরিবেশগত কারণে অ্যাজমা হয়। সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও সাধারণত শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

এজমা রোগ কি?

হাঁপানি একটি শ্বাসযন্ত্রের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এটি আসলে একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ। অ্যাজমা বা হাঁপানি সাধারণত শ্বাসকষ্টের কারণে হয়। হাঁপানি মানবদেহের একটি অসহনীয় ও যন্ত্রণাদায়ক রোগ। আর এই শ্বাসকষ্টের উপদ্রব হয় নানা রকম অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অ্যালার্জেনের কারণে।

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি সমস্যা হয়?

শ্বাসকষ্টের পেছনে বেশ কিছু মেডিকেল ও নন-মেডিকেল কারণ রয়েছে। এটি উচ্চতায় ঘটতে পারে বা যখন বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক স্তরে থাকে বা তাপমাত্রা খুব বেশি হয় এমনকি ভারী ব্যায়ামের পরেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
বেশ কিছু মেডিকেল শর্ত রয়েছে যার কারণে একজন ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হয়। অ্যালার্জি, অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের রোগ, নিউমোনিয়া, স্থূলতা, যক্ষ্মা রোগের মতো সমস্যাও শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

Sharing Is Caring:

আমি জিয়ারুল কবির লিটন, একজন বহুমুখী ব্লগার, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, জীবনধারা এবং ইসলামিক বিষয় সহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির প্রতি অনুরাগী। আমি কঠোর অন্বেষণ, অনুসন্ধান, তত্ত্বানুসন্ধান ও অনলাইনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে আমার আকর্ষক লেখার এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ব্লগের মাধ্যমে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং ইতিবাচকতা দিক গুলো নির্ভুল ভাবে সবার সাথে ভাগ করে চলার চেষ্ট করছি।

Leave a Comment